ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজারে এখনো বিক্রি হচ্ছে মানহীন সেই ৫২ পণ্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৯
বাজারে এখনো বিক্রি হচ্ছে মানহীন সেই ৫২ পণ্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে মানহীন ৫২ পণ্য, ছবিটি যাত্রবিাড়ীর একটি দোকান থেকে তোলা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারসহ অলি-গলির দোকানগুলোতে এখনও বিক্রি হচ্ছে মানহীন ৫২ পণ্য।  শনিবারের (১৮ মে) মধ্যে পণ্যগুলো প্রত্যাহার করার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো তা করেনি।

গত ১২ মে নিম্নমানের এসব পণ্য বাজার থেকে জব্দ করে ধ্বংস করতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নিদের্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এদিকে হাইকোর্টের রায়ের পর ৭দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শুধু বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এ পর্যন্ত ৫২টি পণ্যের মধ্যে ৯টির লাইসেন্স বাতিল করেছে।  

তবে হাইকোর্টের রায়ের পর অনেক ভোক্তা সচেতনও হয়েছেন। অনেকে বাজার করতে গিয়ে সঙ্গে নিয়ে গেছেন বিক্রি নিষিদ্ধ মানহীন সেই ৫২ পণ্যের তালিকা।

পড়ুন>>৫২ পণ্যের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকারের অভিযান

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড়, ধূপখোলা মাঠ, দয়াগঞ্জ বাজার, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজারের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ বেশ কিছু দোকানে খোঁজ নিয়ে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই দেখা গেছে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, এসব বাজার ছাড়াও অলি-গলির দোকানগুলোতে এখনও নিষিদ্ধ সেই ৫২ পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তবে এসব পণ্য দোকানের সামনে রেখে বিক্রি করতে দেখা যায়নি। দোকানের পেছনে রেখে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।  

এদিকে দুয়েকটি কোম্পানি কিছু পণ্য বাজার থেকে সরালেও এখনো শেষ করতে পারেনি। এছাড়া অন্যান্য কোম্পানির পণ্যও রয়ে গেছে বাজারে। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের এসব পণ্য সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিতেও দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।  

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অনেকেই জানেন না। আবার এমনও রয়েছেন যারা জেনেশুনেই ক্রেতাদের গছিয়ে দিচ্ছেন মানহীন পণ্যগুলো। আর এতে প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ভোক্তারা।

সূত্রাপর বাজারের মেসার্স বিসমিল্লাহ স্টোরের মো. রিপন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখনো এসব পণ্য বিক্রি করছি। তবে পণ্যগুলোর উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, তারা বাজার থেকে এসব পণ্য উঠিয়ে নেবে। উঠিয়ে নিলে তো আর বিক্রি করবো না। গতকাল তীরসহ দুটি কোম্পানি কিছু পণ্য নিয়ে গেছে। তবে এখনো অনেকে আসেনি। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এসব কোম্পানির পণ্য বিক্রি করছি।  

যাত্রাবাড়ী বাজারের কাজল জেনারেল স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী কাজল বেপারী বলেন, তীরসহ অন্যান্য দুয়েকটি কোম্পানি মানহীন পণ্য উঠিয়ে নিচ্ছে। তবে সবপণ্য নিতে পারেনি। কিন্তু বাঘাবাড়ীর ঘিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পণ্য নেয়নি। অনেকে আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছে।  

তিনি বলেন, আমার দোকানে নিষিদ্ধ হওয়া নিম্নমানের পণ্যগুলোর কিছু রয়েছে। এগুলো নিয়ে সমস্যায় পড়েছি আমরা । ২০ টাকার পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে হাজার হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। অথচ নিম্নমানের পণ্যের সব দায় কোম্পানির।

পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজারের মেসার্স মা-বাবা স্টোরের  স্বত্ত্বাধিকারী মো. রানা বাংলানিউজকে বলেন, হাইকোর্ট ৫২টি পণ্য নিষিদ্ধ করেছে-সেটা জানি। তবে কোন কোন পণ্য যে বিক্রি করা যাবে না সেটা তো আমরা জানি না। কোম্পানি থেকেও এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।  

‘নিজ থেকে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন-শিগগির তারা বাজার থেকে পণ্য উঠিয়ে নিয়ে যাবে। ’ 

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এ বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দুইদিনের সময় দেয়া হয়েছে। আজ (শনিবার) এ সময় শেষ হবে। কাল (রোববার) থেকে বাজার এসব পণ্য পাওয়া গেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।

একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হকও।  

তিনি বলেন, এসব পণ্যের বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনদিনের কথা বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে না নিলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।  

এদিকে বিএসটিআই সুত্রে জানা গেছে, আদালতের আদেশের পর বৃহস্পতিবার (১৬ মে) পর্যন্ত ৯টি পণ্যের লাইসেন্স বাতিল এবং ২৫টি পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন স্থগিত করেছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে মানহীন পণ্য বিক্রি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি এবং ওজন যন্ত্রের ভেরিফিকেশন সনদ গ্রহণ না করার অপরাধে ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।  

এছাড়া নতুন করে ব্যবস্থা নেয়া পণ্যসহ ৫২টির সবগুলো শনিবারের মধ্যেই বাজার থেকে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকেই তুলে নিতে হবে। পণ্য প্রত্যাহার না করলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বিএসটিআই।

রমজান মাস উপলক্ষে খোলা বাজার থেকে ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে বিএসটিআই। প্রতিবেদন পাওয়া ৩১৩টি পণ্যের মধ্যে ৫২টি পণ্য নিম্নমানের প্রমাণিত হয়। সরিষার তেল, হলুদের গুঁড়া, কারি পাউডার, লাচ্ছা সেমাই, আয়োডিনযুক্ত লবণ, ড্রিংকিং ওয়াটার, স্পেশাল ঘিসহ এসব নিম্নমানের পণ্য দেশের নামি-দামি ব্র্যান্ডের।  

ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করে কনশাস কনজুমার সোসাইটি নামের একটি সংগঠন। পরে গত ১২ মে এই ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশ বাস্তবায়ন করে ১০ দিনের মধ্য প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।  

বিক্রি নিষিদ্ধ পণ্য হলো- তীর, জিবি, পুষ্টি ও রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সরিষার তেল, সান ব্র্যান্ডের চিপস, আরা, আল সাফি, মিজান, দিঘী, আর আর ডিউ, মর্ণ ডিউ ব্রান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকানের ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, মিষ্টিমেলা, মধুবন, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি ব্র্যান্ডের নুডলস, টেস্টি তানি তাসকিয়া ও প্রিয়া সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশ, ফ্রেশ ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, ড্যানিশ ব্র্যান্ডের কারি পাউডার, বনলতা ব্র্যান্ডের ঘি, পিওর হাটহাজারীর মরিচের গুঁড়া, মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ, কিং ব্র্যান্ডের ময়দা, রূপসা ব্র্যান্ডের দই, মক্কা ব্র্যান্ডের চানাচুর, মেহেদী ব্র্যান্ডের বিস্কুট, বাঘাবাড়ী স্পেশালের ঘি, নিশিতা ফুডসের সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিল ফুডের হুলুদের গুঁড়া, মধুমতি ব্র্যান্ডের আয়োডিনযুক্ত লবণ, সান ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, গ্রীনলেনের মধু, কিরণ ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিন ব্র্যান্ডের মরিচের গুঁড়া, ডলফিন ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, সূর্য ব্র্যান্ডের মরিচের গুঁড়া, জেদ্দা ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, অমৃত ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপার, তিন তীর, মদিনা, স্টারশিপ ও তাজ ব্র্যান্ডের আয়োডিন যুক্ত লবণসহ ৫২টি ব্র্যান্ডের পণ্য।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৯
জিসিজি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।