ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ রজব ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চলছে চামড়া কেনা, দৃষ্টি এফবিসিসিআই’র দিকে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
চলছে চামড়া কেনা, দৃষ্টি এফবিসিসিআই’র দিকে পোস্তায় আড়তে চামড়ায় লবণ দেওয়া হচ্ছে

ঢাকা: পুরনো বকেয়া রেখেই দ্বিতীয় দিনের মতো চামড়া কিনছেন ট্যানারি মালিকরা। মালিকদের আশ্বাসে নিজ নিজ আড়তে কেনা কাঁচা চামড়া বিক্রি করলেও শঙ্কা রয়েই গেছে আড়তদারদের মধ্যে। তবে শঙ্কা-আশ্বাসের মধ্যে কাঁচা চামড়া বিক্রি হলেও সবার দৃষ্টি এখন ২২ আগস্টের (বৃহস্পতিবার) দিকে।

কারণ ওই দিন আড়তদারদেরকে পুরনো বকেয়া পরিশোধের কথা আছে ট্যানারি মালিকদের। যার সমঝোতা করবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর লালবাগের পোস্তা এলাকায় সকাল থেকেই বিভিন্ন ট্যানারি মালিকদের আড়ত থেকে চামড়া সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার ও ট্যানারি মালিকরা মিলে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন অনেক আগেই। গত বছরের দামই এ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হারে নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকায় সংগ্রহ করতে বলা হয় ব্যবসায়ীদের। তবে ট্যানারি মালিকদের বকেয়ার কারণে অনেক কম দামেই কিনতে হয় আড়তদারদের।

আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া সংগ্রহ করছেন। তবে নগদ টাকায় চামড়া বিক্রি করতে না পারায় কিছুটা শঙ্কাও তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। তারা কিছু নগদ ও কিছু টাকা বাকিতে চামড়া ছেড়ে দিচ্ছেন। অন্যদিকে ট্যানারি মালিকরা বলছেন, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের মধ্যে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো যা এখন মীমাংসিত। তারা আমাদের চামড়া দিচ্ছেন, আমরাও গতকাল থেকে সারা দেশে পুরোদমে চামড়া কেনা শুরু করেছি। যা আগামী দুই/তিন মাস ধরে চলবে।

লালবাগ পোস্তা এলাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৯৯০ সাল থেকে ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের বকেযা রয়েছে, অনেক ট্যানারি দেউলিয়া হয়েছে। গত দু/তিন বছর ধরে ট্যানারি মালিকরা পুরনো বকেয়া পরিশোধ না করে নতুন করে আবারও বকেয়া রেখেছে। এ কারণে নগদ অর্থের অভাবে তাদের পক্ষে চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

পোস্তার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী হাজি সাঈদ বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে বিভিন্ন সময়ে আমার তিন কোটি টাকা বকেয়া আছে। এ বছর ধার-দেনা করে কিছু চামড়া সংগ্রহ করেছি, এখন আবারও সেই বাকি-নগদ মিলে বিক্রি করছি। জানি না এবারও এই বাকিটা তুলতে পারবো কিনা।

একই কথা জানান অপর আড়তদার সাজ্জাদ বলেন, ট্যানারি মালিকরা সরকার ও ব্যাংকের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন অথচ আমাদের বকেয়া পরিশোধ করছেন না। তাদের কাছে বকেয়া থাকায় অনেকেই এবার চামড়া কিনতে পারিনি। আমাদের অনেক টাকা বকেয়া থাকা সত্ত্বেও ৭০০/৮০০ টাকা দরে চামড়া কিনেছি। গতকাল থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে, কিছু নগদ কিছু বাকি টাকাতে। জানি না এ বকেয়া কবে নাগাদ পাবো। তবে ট্যানারি মালিকরা সময়মতো টাকা পরিশোধ করলে আমরা ভালো দামে চামড়া সংগ্রহ করতে পারি, এতে কারো লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এবার অনেকেই ধার-দেনা করে চামড়া কিনেছে, অনেকেই কিনতে পারেনি। যারা কিনেছে সবার সিদ্ধান্ত মতে আমরা সোমবার থেকে চামড়া বিক্রি শুরু করেছি। যে চামড়া বিক্রি হচ্ছে তার অর্ধেক বাকিতে, আমরা আশ্বাসে তাদের কাছে চামড়া দিচ্ছি। আমরা ব্যবসায়ীরা ২২ আগস্টের দিকে তাকিয়ে। ওইদিন এফবিসিসিআই’র মধ্যস্ততায় আমাদের বকেয়া পরিশোধের কথা আছে। যদি ট্যানারি মালিকপক্ষ পুরনো বকেয়া পরিশোধ করেন তবে সবার জন্য ভালো, না হলে চামড়ার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখায়াত উল্লাহ বলেন, আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে দুই দিন চামড়া কেনা হয়নি। চামড়া কেনা শুরু হয়েছে, যা আগামী তিন মাস পর্যন্ত চলবে। আশা করছি, বকেয়ার বিষয়টি আগামী ২২ আগস্ট এফবিসিসিআই’র মাধ্যমে সমাধান হয়ে যাবে। পুরনো বকেয়া কিভাবে দেওয়া যায় সেটা ঠিক করা যাবে ওইদিন। তবে সব জটিলতা শেষে সরকার নির্ধারিত দামেই আমাদের চামড়া কেনা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯ 
ইএআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।