ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে কমলেও প্রভাব নেই খুচরায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯
পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে কমলেও প্রভাব নেই খুচরায় পাইকারি বাজারে দাম কমেছে পেঁয়াজের। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সরকারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমানোর ঘোষণার পর পেরিয়ে গেছে ১২ দিন, অবস্থা এখনো আগের মতোই। মিয়ানমার থেকে আমদানি, টিসিবির খোলা বাজারে বিক্রি শুরুর পরও পেঁয়াজের দাম এখনো চড়া। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দাম পাঁচ থেকে সাত টাকা কমলেও এর প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। এখনো ৭০-৮০ টাকা কেজিতেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

জানা যায়, কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ১০০ শতাংশ ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শ্যামবাজার, সূত্রাপুর, দয়াগঞ্জ, ধূপখোলা, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজারসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  

শ্যামবাজারের পাইকারি আড়তে মেসার্স মাতৃ ভাণ্ডারের শহিদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ কম আসছে। মিয়ানমার থেকেও যা আসছে, চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তবে, চীন ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম কমবে। যদিও, সেই পেঁয়াজ আসতে অন্তত এক মাস লেগে যাবে। আর, দেশের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে তিন মাস পর। তাই বলা যায়, আগামী দুই-তিন মাস পেঁয়াজের দাম কমছে না।  

তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

রাজিব বাণিজ্য ভাণ্ডারের ঝন্টু সাহা বাংলানিউজকে বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম পাঁচ থেকে সাত টাকা কমেছে, আমদানি বাড়লে আরও কমবে। মিয়ানমার থেকে আসছে, মিশর, চীন ও পাকিস্তানের পেঁয়াজের জন্য এলসি করা হয়েছে। এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আসলে দাম কমবে।  

ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি।  ছবি: বাংলানিউজ

জানা গেছে, দেশে চাহিদার চেয়ে পেঁয়াজের উৎপাদন অনেক কম। পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ টন, বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১২ থেকে ১৩ লাখ টন। বাকি ১০ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, যার বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে।  

সম্প্রতি ভারতের মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও মধ্য প্রদেশের মতো পেঁয়াজের বড় সরবরাহকারী রাজ্যগুলোতে বন্যার কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে, সেখানকার সরকার পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। বর্তমানে প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য দাঁড়িয়েছে ৮৫০ ডলার। দুই মাস আগেও ব্যবসায়ীরা প্রতি টন পেঁয়াজ ৩৫০ থেকে ৪০০ ডলারে আমদানি করতেন। আর, এক বছর আগে পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ ডলার। ভারত হঠাৎ রপ্তানিমূল্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারে।

মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। প্রথমে পাঁচটি স্পটে এ কার্যক্রম শুরু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১০টি ট্রাক ২০টি স্পটে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। একেকজন ডিলার ৪৫ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন এক হাজার কেজি (এক টন) পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।  

তবে, টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির প্রভাব নেই খুচরা বাজারগুলোতে। এক ক্রেতা বলেন, টিসিবি এত অল্প পরিমাণে পেঁয়াজ বিক্রি করছে, যা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। তাহলে কীভাবে বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে?

রায়সাহেব বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, টিসিবির বিক্রি দিয়ে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। সেখান থেকে কয়জনই বা কেনার সুযোগ পায়! পেঁয়াজের দাম কমাতে হলে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯ 
জিসিজি/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।