ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বদলে যাচ্ছে দেশের পরিচয়, অর্থনীতির ধারা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
বদলে যাচ্ছে দেশের পরিচয়, অর্থনীতির ধারা

ঢাকা: একসময় বাংলাদেশের পরিচয় ছিল কৃষিনির্ভর দেশ হিসেবে। দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরতো কৃষি ওপর ভিত্তি করেই। তবে, বর্তমানে সে চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষির অবদান কমছে, বাড়ছে শিল্প খাতের অবদান। বিশ্লেষকেরা বলছেন, কৃষিপ্রধান দেশের পরিচয় বদলে ধীরে ধীরে শিল্পপ্রধান দেশ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৪৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, শিল্পের অবদান ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে কৃষির অবদান ৫১ দশমিক ০৩ শতাংশ ও শিল্পের অবদান ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

বর্তমান সময়ের চিত্র হচ্ছে, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ (প্রক্ষেপণ) অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষির অবদান যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৭৭, ১৪ দশমিক ১৭, ১৩ দশমিক ৮২ ও ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে, শিল্পের অবদান ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ (প্রক্ষেপণ) অর্থবছরে যথাক্রমে ২৮ দশমিক ৭৭, ২৯ দশমিক ৩২, ৩০ দশমিক ১৭ ও ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ।  

ধারাবাহিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, জিডিপিতে কৃষির অবদান ক্রমশ কমছে। সেই তুলনায় জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান বাড়ছে বেশ দ্রুত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯০টি অর্থনৈতিক জোনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি জোনের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব অর্থনৈতিক জোন থেকে জিডিপি আরও দুই শতাংশ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং বিভাগের উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ অবদান কমলেও কৃষির পরোক্ষ অবদান কম নয়। দেশের শিল্প বাড়ছে, তবে শিল্পের কাঁচামাল কিন্তু কৃষি থেকেই আসছে। যেকোনো দেশের উন্নয়নের জন্য শিল্পের অবদান বাড়তেই হবে। নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনীতির চালিকাশক্তি শিল্প থেকেই আসবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সিনিয়র ইকনোমিস্ট ড. আশিকুর রহমান শান্ত বাংলানিউজকে বলেন, দেশের কৃষিতেও অনেক উৎপাদন হচ্ছে। তবে, জিডিপিতে কৃষির অবদানের মাত্রা কমে গেছে। সেই তুলনায় শিল্প খাতের অবদান অনেক বেড়েছে। জিডিপিতে কৃষির অবদান কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে কৃষির অবদান ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি থাকে না। সুতরাং, আমরা যে উন্নত দেশের কাতারে রয়েছি, এ বিষয়টা থেকেই বোঝা যায়।

দেশে শিল্প খাতের প্রসার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার শিল্পবান্ধব। অতীতে শিল্প খাতের যে সমস্যাগুলো ছিল, আমরা সেগুলো দূর করেছি। আমরা বিদ্যুৎঘাটতি দূর করেছি, শিল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। বর্তমানে শিল্পের উন্নত পরিবেশ থাকায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসছে। ফলে, দ্রুত শিল্পের প্রসার ঘটছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি শিল্প খাত। আমাদের লক্ষ্য, এই খাতকে আরও এগিয়ে নেওয়া।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় বড় শিল্পাঞ্চল হচ্ছে, এটা দেশের জন্য ইতিবাচক। শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিও দেশের জন্য মঙ্গলকর। তবে, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া কিছুটা আশঙ্কাজনক। এটি কমতে দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, খাদ্য যদি দেশেই উৎপাদিত হয়, তাহলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
আরকেআর/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।