ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন

ঢাকা: প্রবাসী ও বাংলাদেশে অবস্থানরত সব বিদেশিদের গণনার আওতায় আনা হবে। পৃথিবীজুড়ে প্রায় এক কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের বাদ দিয়ে আর জনশুমারি নয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বসবাস করেন, তাদের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। সৌদি আরব ছাড়াও আরব বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার ও বাহরাইনে প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস। এসব প্রবাসীদের গণনা করা হবে। 

একইভাবে বাংলাদেশেও নানা প্রকল্পে ভারত, জাপানসহ নানা দেশের নাগরিক কর্মরত। এসব নাগরিকদেরও গণনার আওতায় আনা হবে।

‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ প্রকল্পের আওতায় এ কাজ সম্পন্ন হবে। এটিসহ ১০ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।  

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভায় ১০ প্রকল্পের মোট ব্যয় ১১ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। জনশুমারি ‍ও গৃহগণনা প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৭৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একনেক সভায় ১০ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্প’। ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি জনশুমারি শুরু হয়ে চলবে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। সবাই জনশুমারিতে অংশ নেবেন।
 
জানা যায়, ৬ষ্ঠ জনশুমারিতে কেউ বাদ যাবে না। প্রবাসী ও দেশে অবস্থানরত বিদেশিদের গণনা করা হবে। একইসঙ্গে জনশুমারিতে স্মরণ করা হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২১ সালের ১৭ মার্চ রাত ১২টাকে শুমারি মুহূর্ত ধরে পরবর্তী সাত দিন জনশুমারি ও গৃহগণনা করা হবে। ২০২১ এর মাঠ পর্যায়ে মূল শুমারির তথ্যসংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনার ৩৬৫ দিনের কাউন্ট ডাউন শুরু করা হবে।
 
‘পপুলেশন অ্যান্ড হাউজিং সেনশাস ২০২১’ প্রকল্পের আওতায় ৬ষ্ঠ জনশুমারি অনুষ্ঠিত হবে। স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে ২০২১ সালে ৬ষ্ঠ ডিজিটাল জনশুমারি করা হবে। এ পদ্ধতিতে দেশের একটি থানাও (পরিবার) বাদ পড়বে না। স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে জনশুমারিতে সারাদেশে চার লাখ গণনাকারী তথ্য সংগ্রহ করবেন। শিক্ষিত বেকারদের জনশুমারি প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে। এর আগে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের জনশুমারির কাজে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না। সাত দিনে চার কোটি থানায় (পরিবার) তথ্য সংগ্রহ করা হবে। একজন গণনাকারী ১০০টি থানার তথ্য সংগ্রহ করবেন। ফলে এক সপ্তাহে ৮ হাজার টাকা আয় করবেন তারা।

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমানবিক নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রকল্পটি ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য পারমাণবিক নিরাপত্তা অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন করা হবে।  

এছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের কোড, গাইড, প্রবিধান ও স্টান্ডার্ড প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করা হবে। সেইসঙ্গে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মাণ পর্যায়ে লং টার্ম  ম্যানুফ্যাকচারিং ইক্যুপমেন্ট, উৎপাদন পর্যায়ে ফুয়েল উত্তোলন, কমিশনিং এবং পরিচালনা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শন পরিচালনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ঢাকায় ০ দশমিক ৫০ একর এবং রূপপুরে ২ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, ঢাকায় ১০ তলা অফিস ভবন নির্মাণ, রূপপুরে ৬ তলা অফিস ভবন, ১০ তলা আবাসিক ভবন এবং তিন তলা রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হবে।  

এছাড়া রাশিয়া থেকে ১২ হাজার ৪৬২ এবং ভারত ও অন্য স্থান থেকে ৯৮৪ জনমাস পরামর্শক সেবা গ্রহণ করা হবে। সেইসঙ্গে ৬০ সেট  বৈদেশিক যন্ত্রপাতি, ২৩২ সেট স্থানীয় যন্ত্রপাতি, ৬টি যানবাহন ক্রয় এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশে ৪টি মেরিন একাডেমি স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। তবে এ প্রকল্পটি ব্যয় না বাড়িয়ে শুধু মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কিশোরগঞ্জ পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর-টোক জেলা মহাসড়ককে যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭২৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
 
স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেপ) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৫০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি প্রকল্প-৩ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭২৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার পদ্মা শাখা নদীর ডান তীরের ভাঙন থেকে নওয়াপাড়া এলাকা এবং পদ্মা নদীর বাম তীরের ভাঙন থেকে চরআত্রা এলাকা রক্ষা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৩২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ঢাকা আরিচা-মহাসড়কের আমিনবাজার, সালেহপুর ও নয়ারহাট নামক স্থানে ৩টি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রতিটা সেতু ৮ লেন হবে। সেতুগুলো ব্যবহারের জন্য টোল নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
এমআইএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।