ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স প্রবাহে এডিবির হাজার কোটি টাকা ঋণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৯
কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স প্রবাহে এডিবির হাজার কোটি টাকা ঋণ ইআরডি ও এডিবির মধ্যে দু’টি ঋণচুক্তি সই হয়েছে। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য ১৫ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। কর্মসূচির আওতায় দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্মমুখী প্রশিক্ষণ পাবেন ১২ লাখ ৫০ হাজার নারী ও পুরুষ।

এই বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও এডিবির মধ্যে পৃথক দু’টি ঋণচুক্তি হয়েছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব ফরিদা নাসরিন ও এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ ঋণচুক্তিতে সই করেন।

মেশিনশপ, ওয়েল্ডিং ও ইলেকট্রিক্যাল মেইনটেন্যান্স ট্রেডে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)। প্রশিক্ষণার্থীদের কারখানায় চাকরি পাওয়ায় সহায়তা করা হবে। তাদের ন্যূনতম জেএসসি পাস হতে হবে। প্রশিক্ষণের সব খরচ বহন করবে স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি)। প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন মাস ও শিল্প কারখানায় ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মেয়াদ এক মাস। আবেদন করার সময় সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম সনদ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরের দেওয়া নাগরিকত্ব সনদপত্র, সদ্যতোলা এক কপি পাসপোর্ট ও এক কপি স্ট্যাম্প সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে।

অবিবাহিতা, তালাকপ্রাপ্তা, দুস্থ, অসহায় বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের পাঁচটি ট্রেডে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। নার্সারি বা হর্টিকালচার, কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামতকরণ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ইলেকট্রনিকস অ্যাসেম্বলিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সব প্রশিক্ষণের জন্য এসএসসি বা জেএসসি পরীক্ষায় পাস হতে হবে। প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন মাস। প্রার্থীর বয়সসীমা ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ বছর। প্রশিক্ষণের জন্য কোনো ফি গুনতে হবে না। প্রশিক্ষণ শেষে কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে দেওয়া হবে সনদ। প্রশিক্ষণার্থীদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া আবাসিকদের জন্য মাসিক ৩০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও সহায়তা করা হবে।

জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদে ১ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে স্কিল ফর ইমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি) শীর্ষক কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) মাল্টি ট্রান্স ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটির (এমএফএফ) আওতায় এ কর্মসূচির জন্য তিন কিস্তিতে মোট ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম কিস্তি ১০০ মিলিয়ন ও দ্বিতীয় কিস্তিতে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে।

কর্মসূচিটি মূলত শিক্ষা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, শিল্প, বাংলাদেশ ব্যাংক, পিকেএসএফ-এর বিভিন্ন বেসরকারি প্রশিক্ষণের আওতায় বাস্তবায়িত হবে। কর্মসূচির আওতায় বাজারে চাহিদা মোতাবেক ছয়টি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। খাতগুলো হলো তৈরি পোষাক, নির্মাণ, চামড়া ও জুতা, জাহাজ নির্মাণ, তথ্য প্রযুক্তি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং।

অপরদিকে, আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ১৭ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে এডিবি সরকারকে ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে। অবশিষ্ট ৬ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সরকারের তহবিল থেকে খরচ করা হবে। এডিবির দেওয়া ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহজ শর্তের অর্ডিনারি ক্যাপিটাল রিসোর্সেস কনসেশনাল লোন হিসেবে দেওয়া হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে তিন পার্বত্য শহর রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এবং কুমিল্লা ও ঈশ্বরদীর ভূ-পৃষ্ঠের পানি সরবরাহের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন।

চুক্তি সই শেষে ফরিদা নাসরিন বলেন, এডিবি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, পানি সম্পদ ও সুশাসন খাতে ঋণ দিয়েছে এডিবি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে সরকারের লক্ষ্য পূরণেও পাশে থাকবে সংস্থাটি।

মনমোহন প্রকাশ বলেন, দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ঋণ দিতে পেরে এডিবি আনন্দিত। বাংলাদেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন দেশের জনশক্তিকে কাজে লাগানো। এজন্য দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। ফলে দক্ষ জনবল তৈরি করতে আরও সহযোগিতা করবে এডিবি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
এমআইএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।