ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ট্রাক্টরই এখন কৃষকের ‘গলার কাঁটা’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৯
ট্রাক্টরই এখন কৃষকের ‘গলার কাঁটা’

ঢাকা: ট্রাক্টর দিয়ে নিজের জমি ছাড়াও গ্রামের অন্যদের জমি চাষ করে থাকেন উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুরের পীরগঞ্জের মো. জাকির হোসেন। কিছু পরিবহনের কাজও করে থাকেন এই ট্রাক্টর দিয়েই। মাঝে মধ্যে তেল নিতে তাকে শহরে যেতে হয়। এসময় পার হতে হয় জেলা সদরের সড়ক।

তবে ট্রাক্টর ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন সময়েই তাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বড় অঙ্কের চাঁদাও দাবি করা হচ্ছে তার কাছে।

এখন পরিস্থিতি এমন যে, ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করাই বন্ধের উপক্রম।

একই অবস্থা গাইবান্ধা সদরের সোহেল রানার। গত কয়েক মাস ধরেই তিনি নানান সময়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের আশপাশের গ্রামে জমি চাষে ট্রাক্টর প্রয়োজন। বেশ কিছু মানুষ ট্রাক্টর কিনতে চাইলেও হয়রানির কারণে কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে প্রথাগতভাবেই হালের লাঙল দিয়ে জমি চাষ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

আবার নতুন করে ট্রাক্টর প্রয়োজন হলেও কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না কৃষক। প্রতি বছর সাড়ে তিন-চার হাজার ট্রাক্টর বিক্রি হয় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। কিন্তু ভীতিকর প্রভাবে এ অঞ্চলে ট্রাক্টর বিক্রি কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় বর্তমানে ট্রাক্টর বিক্রি নেই বললেই চলে।

গত মাসে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের ক্ষেতলাল উপজেলার মালন্দ এলাকায় ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। উপজেলার মানিকপাড়া গ্রামের কৃষক শামসুল হুদা বকুল ও রিপন হোসেনের ট্রাক্টরটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারাও এখন ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করতে সাহস পাচ্ছেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও শতভাগ যান্ত্রিকীকরণের আওতায় আসেনি জমি চাষ। তাই চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমানো এবং মাটির গুণাগুণ ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ট্রাক্টর। এছাড়া শ্রমিক সংকট মেটাতেও কার্যকর ভূমিকা রয়েছে যন্ত্রটির। জমি তৈরি ছাড়াও কৃষিপণ্য পরিবহন ও বহুমুখী ব্যবহারে কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে ট্রাক্টর। কিন্তু এখানকার কৃষকের এমন আতঙ্কের ফলে ট্রাক্টর ব্যবহার অনেকটাই বন্ধের উপক্রম।

দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল বলেন, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এ তিন মাসই হলো ট্রাক্টর বিক্রির উপযুক্ত মৌসুম। সারাদেশেই এখন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। উত্তরবঙ্গে কৃষকের সঙ্গে চলমান ঘটনায় এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ট্রাক্টর চালানোর ক্ষেত্রে জটিলতা থাকলে তা দ্রুত সমাধান করতে হবে।  

‘চালকদের লাইসেন্সিং করা এবং গাড়িগুলোকে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ দিতে হবে। তা নাহলে কৃষকের মনে আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এতে যান্ত্রিকীকরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কৃষি খাত বিপাকে পড়তে পারে। ’

অ্যাগ্রিকালচারাল ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার ট্রাক্টর কার্যকরভাবে চালু রয়েছে। চলতি বছরে নতুন অনুষঙ্গ উত্তরাঞ্চলে ভীতিকর পরিবেশ। গত কয়েক মাস ধরেই চলতে দেওয়া হচ্ছে না ট্রাক্টর। ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা কিংবা তেলের পাম্প থেকে তেল নিতে গেলে বা কোনোভাবে সড়কে উঠলে আটক করা হচ্ছে ট্রাক্টর। পাশাপাশি দাবি করা হচ্ছে বড় অঙ্কের চাঁদা।

বিক্রি বন্ধ থাকলে সরকারের যান্ত্রিকীকরণে চলমান ভর্তুকি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। তাই এক বছরের মধ্যে ট্রাক্টর মালিকদের ট্রাক্টরগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনা যেতে পারে। কীভাবে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কীভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের আরও সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ দিতে পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি দেশে ট্রাক্টর পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারতীয় মডেল অনুসরণ করার সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, দেশের বাজারে ট্রাক্টর সংযোজন, আমদানি ও বিপণন করছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ট্যাফে, এসিআই মোটরসের সোনালিকা, র‌্যাংকন ও কর্ণফুলী লিমিটেডের মাহিন্দ্র, মেটাল প্লাসের আইসার, পারফরম্যান্স মোটরসের স্বরাজ, গেটকোর নিউ হল্যান্ড, ইফাদ অটোসের অ্যাসকর্ট এবং এনার্জিপ্যাকের জন ডিয়ার ব্র্যান্ড।  

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯
এমআইএস/আরকেআর/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।