ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চলতি বছর সাড়ে ৭ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে পাঠাবে সরকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২০
চলতি বছর সাড়ে ৭ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে পাঠাবে সরকার বিদেশগামী কর্মী।

ঢাকা: চলতি বছরের বাংলাদেশ থেকে সাড়ে সাত লাখের বেশি কর্মী বিদেশ পাঠাতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।

তিনি বলেন, আমরা যে বিভিন্ন নতুন নতুন শ্রমবাজার খুলেছি। আরও পাইপ লাইনে আছে।

এবছর আমি আশা করছি, ৬/৭ আরও নতুন দেশে কর্মী পাঠাতে পারবো। বিশেষ করে ইস্ট ইউরোপ থেকে চাহিদা আসছে। এজন্য কিছু দেশে ডিপ্লোমেটিক রিপ্রজেনটিভ দেওয়া চেষ্টা করছি।

রোববার (৫ জানুয়ারি) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টস (আরবিএম) আয়োজিত নতুন বছরে সরকারের শ্রম বাজারের পরিকল্পনা’ নিয়ে মিট দ্য প্রেসে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় বিএমইটির মহাপরিচালক শামছুল আলমসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টসের (আরবিএম) সভাপতি ফিরোজ মান্না, সেক্রেটারি মাসউদুল হকসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রবাসীমন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, আমাদের বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা কমেছে এটা ঠিক। কিন্তু সারাবিশ্বের চাহিদারও পরিবর্তন এসেছে। তা হলো দক্ষকর্মীর চাহিদা। এটা না দিতে পারলে আমরা ফেল করবো। অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি দক্ষ শ্রমিক করার।  আমরা লাখ লাখ কর্মীর কথা বলে থাকি। কিন্তু দক্ষ কতজন পাঠাচ্ছি মাত্র হাজার হাজার। এখানে আমাদের আমুল পরিবর্তন আনতে হবে। দক্ষ শ্রমিক বাজারে এলে আমাদের বাজারও বাড়বে। এজন্য আমাদের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে ১৬৪টিতে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য ও নির্বাচনী ইসতেহারে ছিলো প্রতি উপজেলা থেকে একহাজার দক্ষকর্মী পাঠাবো। কিন্তু আমাদের সব উপজেলাতে এখনও টিটিসি স্থাপন করতে পারিনি। এজন্য আমরা বাকি সবকয়টি উপজেলার জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করে জমা দেওয়া হবে টিটিসি নির্মাণের জন্য।

তিনি বলেন, আমরা যে প্রশিক্ষণ দেই সেটা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণ না করলে ভালো ফল আসবে না। এজন্য আমরা আন্তর্জাতিক যেসব সার্টিফিকেট আছে সেগুলো নেওয়ার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমাদের সার্টিফিকেটের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো হচ্ছে।

জাপানের বাজার নিয়ে ইমরান আহমদ বলেন, জাপানের মতো দেশ এখন আমাদের দেশ থেকে দক্ষকর্মী নিচ্ছে। তবে আমরা খুব কম সংখ্যা কর্মী পাঠাতে পারছি। কারণ জাপান শতভাগ ভাষা ও কাজে দক্ষ লোক নিতে চায়। এখানে হলো আমাদের চ্যালেঞ্জ দক্ষ জনবল সৃষ্টি করা।

বাজার নিয়ে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমাদের দু’তিনটা বাজার নতুন করে সংকট তৈরি হচ্ছে। যেমন ইরাক ও লিবিয়াতে। ইরাকে মার্কিন হামলায় একটা সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বাজার বন্ধ হচ্ছে না আটকে আছে। আশা করছি, এতে আমাদের তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ তারা প্রবাসী কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন আছেন। আর লিবিয়া আমাদের বড় বাজার। তবে আমাদের ভুলের কারণে এ বাজারে প্রবেশ করতে কষ্ট হচ্ছে। লিবিয়াতে কর্মী গিয়ে চলে যায় ইতালি, গ্রিসসহ অন্যান্য দেশে। প্রথমেই আমরা কাজ করি বেআইনি। এতে করে অনেক কর্মী মারা যাচ্ছেন। আমি চাই না আমার দেশের কোনো কর্মী বিদেশে গিয়ে মৃত হয়ে দেশে ফিরে আসুক। আমি চাই দেশে সব কর্মক্ষম মানুষ বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পাক ও একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বানাক।

নতুন বাজার নিয়ে তিনি বলেন, আমরা অনেকগুলো বাজার খুলেছি। আশা করছি লক্ষ্য অনুযায়ী আরও খুলতে পারবো। আমরা শুধুমাত্র আফ্রিকার দেশগুলোর চাহিদা পূরণ করতে পারলে আর কোনো দেশের তেমন প্রয়োজন হয় না।

মালয়েশিয়া বাজার নিয়ে তিনি বলেন, এই বাজারটি অনেকদিন ধরে খোলা হচ্ছে না। আমি চাই না আগের মতন পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা খরচ করে সেখানে যাক। আর জঙ্গলে লুকিয়ে থাকুক। আমরা সে ধরনের কোনো চুক্তি করিনি। আমাদের লক্ষ্য হলো সরকার যে রেট নির্ধারণ করে দেবে তা দিয়েই যেতে হবে। এই সরকার আসার পর মালয়েশিয়ার বাজার নিয়ে যে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কোনো ছোট অনিয়ম করলেও আমরা কাউকে ছাড় দিতে রাজি না। অন্যায়কে আমরা প্রশ্রয় দেবো না। সিন্ডিকেট আমাদের সমস্যা না। আমাদের লক্ষ্য স্বল্প খরচে এক লাখ ৬০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো।

নারীকর্মীর নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সৌদি আরবে নারীকর্মীদের নিরাপত্তায় আমরা এখন অনেক শক্ত অবস্থানে আছি। গত ডিসেম্বর মাসে একজন নারীকর্মী দেশে ফিরেনি। বিদেশে নির্যাতিত হবে এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রবাসীদের কল্যাণের জন্য বিদেশে কোটি টাকার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, এবছর আমরা বিদেশে প্রবাসীদের জন্য পাঁচটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্কুল চালু করবো। এরমধ্যে আগামী ১৭ মার্চের মধ্যে গ্রিসের স্কুল চালু হয়ে যাবে। এছাড়া ব্রাসেসতেও আমরা জায়গা পেয়ে গেছি। সেখানেও স্কুলের কাজ চলছে।

দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এবছর আমরা দালাল চক্র বন্ধ করতে পারবো। এদের জন্য বিদেশগামী কর্মীদের অতিরিক্ত ৪/৫ লাখ টাকা দিতে হয়। এটা আশা করছি, বন্ধ করতে পারবো। আমার অনুরোধ থাকবে বিদেশগামী কর্মীরা ডাটা ব্যাংকে নাম রেজিস্টেশন করবেন। আমরা আপনাদের সেবা দিতে সবসময় প্রস্তুত। তাহলে আমরা দালাল চক্র থেকে আপনাদের বাঁচাতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২০
জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।