ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যশোরে কচুর লতি চাষে বিপ্লব

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২০
যশোরে কচুর লতি চাষে বিপ্লব

যশোর: যশোরে কচুর লতি চাষে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। তুলনামূলক শ্রম ও খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কচুর লতি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। এ লতি চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ছাই। এতে করে ফলনও হচ্ছে বেশি। এরই মাঝে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে যশোরের কচুর লতি।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার আট উপজেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কচুর লতিই চাষ হয়েছে ৮৭৫ হেক্টর জমিতে।

এর মধ্যে বেশি চাষ হয়েছে বারি পানি কচু-১ ও বারি পানি কচু-২ প্রজাতির লতি।  

বাঘারপাড়ার জহুরপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেত পরিচর্যায় কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন কৃষাণীরাও। এ অঞ্চলের শতাধিক কৃষক কচুর লতি চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

জহুরপুর গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কচুর লতি চাষ করছেন তিনি। লতি গজানো পর্যন্ত তারা আনুমানিক ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। বিপরীতে এখন পর্যন্ত লাভ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া জমিতে যা কচু গাছ আছে তাতে করে আগামীতে আরো ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার লতি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন এ কৃষক।  

একই এলাকার চাষি আব্দার হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের কচুর লতি খেতে সুস্বাদু। তাই বাজারে এখানকার লতির চাহিদা রয়েছে। ফলে দামও ভালো পান কৃষকরা।  

কচুর লতি।  ছবি: বাংলানিউজ‘আগে জমিতে ধান চাষ করতাম। গত দুই বছর আগে বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হলে কৃষি অফিসারের পরামর্শে কচুর লতি চাষ করি। লাভও ভালোই হয়েছিল। তখন থেকেই কচুর লতি চাষ করে যাচ্ছি। অন্যান্য সবজির চেয়ে এর দাম বেশি থাকায় লাভও বেশি হয়।

সবজি মোকাম খাজুরা হাটের ইজারাদার মো. সাইফুজ্জামান বলেন, এ অঞ্চলে অল্প খরচে বেশি লাভের চাষাবাদ হচ্ছে কচুর লতি। তাই কৃষকরা এতে আগ্রহী। সপ্তাহে শনি, সোম ও বুধবারে কচুর হাট বসে। হাটে দেড় থেতে দুই হাজার মণ কচুর লতি ওঠে। এখানকার লতি কীটনাশকমুক্ত বলে স্বাদে সুস্বাদু। দেশের অন্য জেলার সঙ্গে যশোরের পরিবহন ব্যবস্থা ভালো থাকায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফরিদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইলসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা কচুর লতি কিনতে এ হাটে আসেন।

কচু চাষের এ বিপ্লব প্রসঙ্গে বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আলম বলেন, যশোর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কচুর লতি চাষ হচ্ছে জহুরপুর ইউনিয়নে। বাঘারপাড়া উপজেলায় মোট ২৬ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে কচুর লতি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে জহুরপুর ইউনিয়নেই ২২ হেক্টর।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বাংলানিউজকে বলেন, জেলার সব উপজেলাতেই প্রায় তিন ফসলির আবাদ ভালো হয়। তবে ধানের চেয়ে সবজির চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলায় সবজির চাষ বেশি হয়। এখানকার কৃষকরা শীতকালীন সবজির পাশাপাশি কম খরচে বেশি লাভের সবজি কচুর লতি চাষে আগ্রহী। আধুনিক পদ্ধতিতে কচুর লতি চাষে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২০ 
ইউজি/এইচজে  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।