ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আমানতের টাকায় যত সম্পদ ফারমার্স ব্যাংকের বাবুল চিশতীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
আমানতের টাকায় যত সম্পদ ফারমার্স ব্যাংকের বাবুল চিশতীর

ঢাকা: ভুয়া ও সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পাইয়ে দিতেন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) সাবেক ইসি কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী। ব্যাংকের শেয়ার দেওয়ার কথা বলে নিতেন কোটি টাকা। এসব ঋণের সুবিধাও শেষ পর্যন্ত নিয়েছেন তিনি। ব্যাংকের আমানতকারীর অর্থ লুট করে এভাবে মালিক হয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের।

জানা যায়, ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত নয়টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরিবারের সদস্যসহ মোট মামলা ১২টি।

এসব ঋণ কেলেঙ্কারির অর্থ ফেরত পেতে বাবুল চিশতীর স্থাবর-অস্থাবর ও ব্যাংক হিসাবে থাকা এফডিআরের অর্থ জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাবুল চিশতীর ভাই মাজেদুল হক চিশতীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ওয়েল টেক্সে। মাজেদুল হক এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখার নামে ওয়েল টেক্সের ঋণ রয়েছে। তবে ওয়েল টেক্সের কর্মচারী আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে কামরুলকে দেখানো হয় মেসার্স সাবাবা অ্যাপারেলসের মালিক।

সাবাবা অ্যাপারেলসের নামে ব্যাক টু ব্যাক এলসি, ডিমান্ড লোন দেওয়া হয় ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। যদিও নামসর্বস্ব এ প্রতিষ্ঠানের ঋণসীমা ছিল এক কোটি ৫০ লাখ টাকা।

পরবর্তীকালে আরও ঋণ দেওয়া হয় শাখা ব্যবস্থাপক জিয়া উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন ব্যবস্তাপনা পরিচালক একেএম শামীম ও বাবুল চিশতীর তত্ত্বাবধানে। সবশেষ সাবাবা অ্যাপারেলসের নামে মোট ঋণ যায় ৩৯ কোটি ৯ লাখ টাকার। বর্তমানে এই ঋণের দায় ঠেকেছে ৪৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকায়। এই ঋণের বিপরীতে মাত্র তিন কোটি ৫২ লাভ টাকার জমি বন্ধক রাখা হয়। যার বাজারমূল্য প্রদশির্ত মূল্যের চেয়ে অনেক কম বলে দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়।

একইভাবে ওয়েল টেক্সের আরেক কর্মচারী মো. রাশেদ আলীকে মালিক দেখানো হয় এডিএম ডাইং অ্যান্ড ওয়াশিং নামে এক প্রতিষ্ঠানের। এই প্রতিষ্ঠানকেও ঋণ দেওয়া হয় ৫৫ কোটি টাকা। এই দুই প্রতিষ্ঠানের নামেই ৮৮ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন বাবুল চিশতী। বর্তমানে যার দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১৪ কোটি টাকার বেশি।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এডিএম ডাইং অ্যান্ড ওয়াশিং এবং সাবাবা অ্যাপারেলসের ঠিকানা দেখানো হয় ওয়েল টেক্সের ঠিকানাকে। ওয়েল টেক্সের কারখানার ভেতরে এডিএম ও সাবাবার দুটো সাইনবোর্ড পান দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। ওয়েল টেক্সের কর্মচারীদের দেখানো হয় এডিএম ও সাবাবার কর্মচারী হিসেবে।

এভাবে বহু প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ সৃষ্টি করে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বাবুল চিশতী। ব্যাংকে রাখা আমানতকারীদের এই অর্থ দিয়ে গড়েছেন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। ঢাকার মহাখালীর ডিওএইচএস অভিজাত এলাকায় কিনেছেন ফ্ল্যাট।

এছাড়া গ্রামের বাড়ি জামালপুরের বকশীগঞ্জের বিভিন্ন মৌজায় কিনেছেন অঢেল সম্পত্তি। এরমধ্যে ২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সম্পত্তির তথ্য পেয়েছে দুদক। এই সম্পত্তির পরিমাণ বাবুল চিশতীর আয়কর বিবরণীতে নেই। বাবুল চিশতীর বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর একটিতে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের আবেদন করেন দুদক কর্মকর্তা।

সেই আবেদনের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত পাওয়া জামালপুরের সব সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালাত। গত ২৭ জানুয়ারি এ আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ ও মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে জামালপুর জেলা প্রশাসক, জেলা রেজিস্ট্রার, যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরকে। একই আদেশ পাঠানো হয় বাবুল চিশতীর নামে হিসাব থাকা সব ব্যাংকের কাছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।