ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনার কারণে পণ্য মজুদ করছেন ভোক্তারা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২০
করোনার কারণে পণ্য মজুদ করছেন ভোক্তারা

ঢাকা: করোনা ভাইরাসে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য কিনে কিনে মজুদ করছেন গ্রাহক এবং ভোক্তাশ্রেণি। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এবং বাড়তি ভিড় বা লোক সমাগম এড়িয়ে চলতেই এমনটা করছেন বলে দাবি ক্রেতাদের।

বুধবার (১১ মার্চ) রাজধানীর মিরপুর ১১ ও ১ নম্বর কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার এবং ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ঘুরে ভোক্তাদের অনেককেই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে দেখা যায়। ক্রেতারা বলছেন, বারবার যেন বাজারে আসতে না হয়, সেজন্য যতটুকু পারছি পণ্য কিনে রাখছি।

বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারাও ভোক্তাদের অতিরিক্ত পণ্য ক্রয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল মালিক বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকদিন ধরে খুচরা বিক্রেতারা বেশি করে পেঁয়াজ নিচ্ছেন। তাদের নাকি ‘ডিমান্ড’ আছে। এদিকে, আমাদেরও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। তাই দিয়ে দিচ্ছি। তবে দাম বাড়েনি।

একই বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, খুচরা চাল বিক্রেতারা দ্বিগুণ মাল নিচ্ছেন। যে ব্যবসায়ী আগে ২৫ কেজি চাল নিতেন, এখন ৫০ কেজি নিচ্ছেন। যারা ৫০ কেজি নিতেন, তারা ১০০ কেজি নিচ্ছেন। চালের চাহিদায় কিছু দামও বেড়েছে। সব ধরনের চালেই পাইকারি পর্যায়ে কেজি প্রতি ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরাও বলছেন একই কথা। কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানদার কায়েস মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ইদানিং সবাই বেশি বেশি বাজার করছে। এখন তো মাসিক বাজার করার সময়ও না। আমরা তো ক্রেতাদের অনেককেই দেখি। যারা এই সময়ে সামান্য বাজার করতেন, তারাও মাসিক বাজারের মতো বাজার করে নিয়ে যাচ্ছেন। যেমন ধরেন, যারা আগে গুঁড়ো দুধের এক কেজির একটা প্যাকেট নিতেন, তারা তিনটা নিচ্ছেন; কেউ কেউ পাঁচটাও নিচ্ছেন। আবার যারা পাঁচ লিটারের তেলের একটি বোতল নিতেন, তারা দুইটা নিচ্ছেন। এভাবেই বেশি নিচ্ছেন।

কায়েস মিয়ার দোকানেই কথা হয় ক্রেতা রাসেল কবীরের সঙ্গে। পেশায় শিক্ষক রাসেল বলেন, কোনো জটিল পরিস্থিতি যদি তৈরি হয়, সে আশঙ্কায় তার আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। এসব পণ্য তো বাসায় মজুদ রাখা যায়, তাই রেখে দিচ্ছি। আবার সবাই বলছেন, লোক সমাগম এড়িয়ে চলতে। তাই বাজারে এখন যেন একটু কম আসা যায়, এরজন্যই বেশি করে কিনে রাখছি।

অনেকেই আবার পরিবেশগত সমস্যার কারণে কাঁচাবাজারে না গিয়ে ডিপার্টমেন্টাল সুপারশপগুলোতে যাচ্ছেন কেনাকাটা করতে। মিরপুর এলাকার গৃহিণী নাহেলা তাসনিম পল্লবীর স্বপ্ন সুপার শপে কেনাকাটার সময় বলেন, শুনেছি চীনে এক মাংসের বাজার থেকেই করোনার উৎপত্তি হয়েছিল। এরপর থেকেই আমি আর কাঁচাবাজারে যাই না। যা কেনার সুপারশপ থেকেই কিনছি। আর এখন একটু বেশি বেশি কিনে রাখছি। যেন ঘন ঘন আসা না লাগে।

এদিকে, ভোক্তারা বেশি পণ্য ক্রয় করলেও বাজারে পণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ আছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

খুচরা চাল বিক্রেতা দিদার হোসেন বলেন, এখনও হয়তো সেভাবে দাম বাড়েনি। তবে মানুষজন যেভাবে কেনাকাটা করছেন, তাতে সরবরাহে টান পড়বে। তখন পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়ে যাবে। আমাদেরও তখন দাম বাড়াতে হবে।

টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা এখনই নেই। যেমন পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতাম, তাই আছে। প্রয়োজন দেখা দিলে দাম আরও কমাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২০
এসএইচএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।