ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনা: ই-কমার্স খাতে দুই হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২০
করোনা: ই-কমার্স খাতে দুই হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

ঢাকা: চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ই-কমার্স খাতের গুরুত্ব নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। এমনই প্রেক্ষাপটে খোদ ই-কমার্স খাতই প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছে। সামগ্রিক ক্ষতির পাশাপাশি অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে প্রায় অর্ধেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) ঘোষিত ই-কমার্স দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটি উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতায় এক ভিডিও কনফারেন্সে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ই-কমার্স এবং ইন্টারনেটকে দেশের ‘লাইফলাইন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

 

সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ খাতের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করা হচ্ছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি যাচ্ছে তাতে এই খাতেই ক্ষতি হতে পারে অন্তত প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
 
ই-ক্যাবের অর্থ সম্পাদক আব্দুল হক অনু জানান, বর্তমানে দেশে ই-কমার্সের প্রায় আট হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। সেই হিসেবে করোনার কারণে ব্যবসা বন্ধ থাকায় প্রতিমাসে ক্ষতি হবে ৬৬৬ কোটি টাকার বেশি। করোনার স্থায়িত্ব তিন মাস হলেও এই খাতে ক্ষতি হবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। অথচ এই খাতে কর্মরত আছেন প্রায় সোয়া লাখ উদ্যোক্তা ও কর্মী। জিডিপিতে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ আসে ই-কমার্স থেকে। ২০১৯ সালে প্রায় ১০০ কোটি টাকার রেমিটেন্স আয় হয় ই-কমার্সের কল্যাণে।
 
এদিকে ব্যবসায়িক মন্দা এবং অস্তিত্ব সংকট নিয়ে ইতোমধ্যে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। সবথেকে ঝুঁকিতে আছেন দেশিয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। অনেকেরই আটকে আছে বিনিয়োগকৃত অর্থ।  

ইটিসি ওয়্যারহাউজ নামক একটি ইকমার্সের উদ্যোক্তা আমিন উদ্দিন সাগর বলেন, আমাদের প্ল্যাটফর্মে বাইরে থেকে আমদানি করে নিয়ে আসা বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট বিক্রি করে থাকি, বিশেষ করে সিসি ক্যামেরা। সম্প্রতি চীনে করোনা শুরু হওয়ার পর পণ্যের দাম বাড়তে থাকে এবং সরবরাহ বন্ধ হবার উপক্রম হয়। তখন নিজের মোটরসাইকেল বিক্রি করে কিছু টাকা একত্রিত করে কিছু মাল আমদানি করে রাখি যেন এই সময়ে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে পারি। কিন্তু সার্বিকভাবে ব্যবসা তো বন্ধ হয়ে আছে। এর মাঝেও অফিসের ভাড়া দিতে হচ্ছে, কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে। আমি নিজে প্রায় ১০ দিন ঘরে বসে আছি। যে পুঁজি বিনিয়োগ করেছি তা উঠবে কি না সেটাই ভাবছি।
 
ঝুঁকির বাইরে নেই শীর্ষ ই-কমার্স এবং মার্কেটপ্লেসগুলোও। প্রিয়শপ ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, এই মুহূতে শুধু বাংলাদেশে না। বিশ্বের প্রতিটি দেশের স্টার্টআপরা কিছুটা খারাপ সময়ে যাচ্ছে। প্রিয়শপ এবং আরও কিছু মার্কেটপ্লেস গ্রোসারি পণ্য এই মুহূর্তে গ্রাহকদের হোম ডেলিভারিতে সরবরাহ করছি। তবে এর ভলিয়ুম আমাদের ব্যবসার যে পরিসর তার তুলনায় কম। স্টার্টআপদের সহযোগিতার জন্য সরকারের বিশেষ একটা ফান্ড আছে। নতুন করে সহায়তা না করে সেই ফান্ড থেকেই যে স্টার্টআপ কাজ করে যাচ্ছে এবং গ্রোথ ভালো তাদেরকে ফান্ড দেওয়া যেতে পারে।
 
আরেক জনপ্রিয় ই-কমার্স শপ পিকাবু এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোরিন তালুকদার বলেন, সরকার যেহেতু এক রকম ছুটি ঘোষণা করেছে কাজেই আর তো কিছু করার নেই। আমাদের সব কর্মীরা সব কাজ রেখে বাসায় বসে আছে। এর নেতিবাচক প্রভাব ব্যবসায় তো পড়ছেই। তবুও বেঁচে থাকার তাগিদে বসে থাকতে হবে। কিন্তু এই অবস্থা যদি আল্লাহ না করুক দীর্ঘায়িত হয় তাহলে অন্যান্য সব খাতের মতো আমাদের অবস্থাও খারাপ হবে।

তিনি আরও বলেন, এ সময়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই কঠিন সময় পার করছে। ই-কমার্স বাংলাদেশে একটি নতুন বিষয়। আমরা সবাই এই বাজারের উন্নয়নে কাজ করছি। করোনা ভাইরাসের এ সময়ে আমরা (পিকাবু) দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্য সরবরাহ করছি তবে আমাদের স্বাভাবিক বিকিকিনির পরিমাণ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। দেশীয় উদ্যোগ হিসেবে সরকারের কাছ থেকে আমাদের আরও কিছু সহযোগিতা দরকার। সব ব্যবসাই বন্ধ আছে এবং প্রতিদিন আমরা মোটা অংকের লোকসান গুনছি।
 
ই-কমার্স খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছ থেকে অনুদান এবং সহজ শর্তে ঋণ চাওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান ই-ক্যাবের পরিচালক আসিফ আহনাফ।  

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা ভাবছি যে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি থেকে কি করা যায়। আজ আমরা ই-কমার্স দিবস পালন করছি যেখানে দিবসটি মানবসেবায় কাজ করার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে যতবেশি সম্ভব সেবা মানুষের বাসায় পৌঁছে দিতে কাজ করছি। তবে এতকিছুর পরেও ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে। অন্যান্য খাত থেকে এই খাত একদমই আলাদা কারণ এখানে বেশিরভাগই তরুণ উদ্যোক্তা। সরকারের যে ম্যানিফেস্টো সেটিকে ধারণ করেই অনেক উদ্যোক্তা এই খাতে এসেছেন। আর তারা বড় রকমের ধাক্কা খাবে। কারণ ব্যবসা চালু না থাকলে অনেক উদ্যোক্তারই দুই মাস অফিস পরিচালনা করার সক্ষমতা নেই। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও ধাক্কা খাবে। এর প্রভাব কর্মীদের ওপর পড়বে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে আমরা সরল ২ শতাংশ হার সুদে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছি। আর ২০০ কোটি টাকা অনুদান চেয়েছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২০
এসএইচএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।