ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনা: বিনিয়োগ করে বিপাকে নারী উদ্যোক্তারা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
করোনা: বিনিয়োগ করে বিপাকে নারী উদ্যোক্তারা ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পহেলা বৈশাখ এবং ঈদ-উল-ফিতরের মতো উৎসবের দিকে মুখিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। ব্যতিক্রম নন ই-কমার্স এবং এফ-কমার্সভিত্তিক নারী উদ্যোক্তারাও। বড় আকারের বিকিকিনি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে এবারও বিনিয়োগ করেন তারা। তবে করোনা ভাইরাসের কবলে সেই বিনিয়োগ নিয়েই এখন বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র এবং মাঝারি নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা।

২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায়ই নারীদের পোশাক বিক্রির জন্য ‘সিঁদুর’ নামের একটি ফেসবুক শপ চালু করেন আফছানা মীর সিঁথী। প্রায় ছয় বছরের চেষ্টায় রাজধানীতে দুইটি শো-রুমও চালু করতে সক্ষম হন।

সাধারণ সময়ে মাসে দেড় থেকে দুই লাখ, বৈশাখে তিন থেকে সাড়ে চার লাখ এবং ঈদে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার শুধু অনলাইনেই বেচাবিক্রি হয় ‘সিঁদুরে’।
 
তবে এবার বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন সিঁথী। প্রায় ছয় লাখ টাকা বিনিয়োগ করে চোখেমুখে রীতিমতো অন্ধকার দেখছেন ওই নারী উদ্যোক্তা।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্যবারের হিসেবে এবারের বৈশাখ ও ঈদকে লক্ষ্য রেখে কাস্টমাইজড ডিজাইনের পোশাক স্টক করেছি। যেহেতু অনলাইন কাজেই পোশাকের ছবি একটা বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে পেশাদার মডেল এবং ফটোগ্রাফার দিয়ে সেগুলোর ছবি তুলেছি। ফেসবুকে বুস্টিং করিয়েছি। আর এখন সব বন্ধ। প্রায় ছয় লাখ টাকার বিনিয়োগ যে হারাতে যাচ্ছি সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারছি। আগামীবার বৈশাখ এবং রোজা প্রায় একইসময়ে কাজেই এবারের পোশাকগুলো আগামীবারও চলবে না।  

রোদে শাড়ি শুকাতে দিয়েছেন এক কারিগর।  ছবি: বাংলানিউজএদিকে দুই শো-রুমের ভাড়া, কারিগরসহ আমার অধীনে থাকা ১০ জন কর্মীর বেতনও বহন করতে হচ্ছে আমাকে। কিভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবো বুঝতে পারছি না।
 
‘গহনা হাটবাজার’ নামে একটি এফ-কমার্স প্ল্যাটফর্মে নারীদের বিভিন্ন ধরনের গহনা আইটেম বিক্রি করেন ফাতেহা আক্তার। নিজস্ব কারিগর দিয়ে নিজস্ব ডিজাইনে গহনা প্রস্তুত করেন ফাতেহা। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় দুই লাখ টাকার গহনা বিক্রি করে গহনা হাটবাজার। বৈশাখ আর ঈদে যা দ্বিগুণ আকার ধারণ করে। তবে এবার বিপদে আছেন ফাতেহাও।  

ফাতেহা আক্তার বলেন, ঈদ আর বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মাল স্টক করেছি। যেহেতু বৈশাখ এর দুই সপ্তাহের মাথায়ই রোজা শুরু তাই একসঙ্গে অনেক স্টক করতে হয়েছে! বৈশাখ আর ঈদ আমাদের প্রধান উৎসব এবং আমাদের সারাবছর এর সেল টার্গেট থাকে এই সময়েই। সব পণ্য মজুদ হয়ে পড়ে আছে। করোনা এর প্রভাবে বিক্রি আর ডেলিভারি একেবারেই বন্ধ। সেল বন্ধ হলেও কর্মীদের বেতন তো চালিয়েই যেতে হবে। রোজার মাসে বেতনের পাশাপাশি ঈদের বোনাসও দিতে হবে। মার্চ আর এপ্রিল পর্যন্ত সামলানো গেলেও মে থেকে অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ যেহেতু আমি ছোট ব্যবসায়ী আমার মূলধন অনেক বেশি না। যা আছে তাও ঈদ আর বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগ হয়েছে। সব শুরু হলেও গহনা কেনার মতো অবস্থা কতোদিনে মানুষের হবে সেটা নিয়েও সন্দিহান।
 
ক্রেতাকে শাড়ি দেখাচ্ছেন এক বিক্রেতা।  ছবি: বাংলানিউজপোশাক-গহনার পাশাপাশি প্রসাধনী সামগ্রী নিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তারাও আছেন অস্বস্তিতে। ‘বিউটি টানেল’ নামক প্রসাধনী বিক্রির পেইজের কর্ণধার সুমাইয়া মুনিরা বলেন, প্রসাধনী সামগ্রী অনেকটা ‘হট কেক’ আইটেমের মতো। অনেক সময় প্রি-অর্ডারই এত থাকে যে, পণ্য আসার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়। সাধারণত নারীরা বাসা থেকে বেরোলে বা কোনো অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সাজগোজ করে। এবার আর তা হচ্ছে না। কাজেই খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
 
ইকমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইকমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রায় এক হাজার ২০০ ইকমার্স ব্যবসায়ী ইক্যাবে নিবন্ধিত আছেন। এদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। এর বাইরেও এফ-কমার্স ভিত্তিক নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। আর সবমিলিয়ে এই খাতের সঙ্গে জড়িত প্রায় তিন লাখ কর্মীদের মধ্যেও প্রায় ২৬ শতাংশ নারী কর্মী। করোনার কারণে ব্যবসায়িক এবং ক্যারিয়ারগত ঝুঁকিতে আছেন সবাই।
 
ইক্যাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ওমেন অ্যান্ড ইকমার্স ফোরাম উইয়ের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা বাংলানিউজকে বলেন, এই সময়টা সবার জন্যই কঠিন একটা সময় যাচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্য তো বন্ধই। ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তারা বেশ বিপাকেই পড়েছেন। তবে পৃথিবী খারাপ দিকে গেলেও মনোবল ভাঙলে চলবে না। আমরা উইয়ের পক্ষ থেকে একটি উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের গ্রুপে প্রায় ৬৩ হাজার নারী সদস্য আছেন। আমরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে পণ্য কেনাবেচা করবো। সেসব পণ্য আমরা ব্যবহারও করবো। উৎসবের দিনগুলোতে বাড়িতে থেকেই উদযাপন করবো। নিজেদের চাঙ্গা রাখতে বা ব্যবসায়িক স্পিরিট ধরে রাখতে আমরা এই উদ্যোগটা নিয়েছি। ইতোমধ্যে গ্রুপ সদস্যরা নিজেদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পণ্য কেনাবেচা করছেন। তবে সরকারকে আহ্বান জানাবো এই সময়ে তারা যেন নারী উদ্যোক্তাদের পাশে এসে দাঁড়ান। অনেকেই স্বল্প পুঁজি নিয়ে কাজ করছেন। নারীদের জন্য এটা শুধুই ব্যবসা নয়, নিজেদের একটা পরিচয়। কেউ হয়তো গৃহিণী বা চাকরিজীবী। তার মধ্যেও নিজের একটা অবস্থান তৈরি করছেন, পরিচয় তৈরি করছেন। তারা জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন। তাদের সাহায্যে সরকার যেন এগিয়ে আসে সেই আহ্বান থাকবে আমার।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২০
এসএইচএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।