ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনা

২০০ কর্মী ছাঁটাই করলো শিওর ক্যাশ

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
২০০ কর্মী ছাঁটাই করলো শিওর ক্যাশ শিওর ক্যাশ

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিকভাবে চাপে পড়ায় বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাইয়ের মত সহজ পথে হেঁটেছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান শিওর ক্যাশ।

প্রধানমন্ত্রী যখন কাউকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তার দুইদিন পরই শিওর ক্যাশ কর্মীদের চাকরিচ্যুত করেছে।

করোনার সংকটের সময় যেখানে বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো কোম্পানিগুলো দেশের তৈরি পোশাকখাতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা দিয়ে যাচ্ছে।

কর্মীদের বাসায় থেকে অফিস করার সুযোগ দিয়েছে। সেখানে শিওর ক্যাশ উল্টো কর্মীদের চাকরিচ্যুত করেছে। এতে শিওর ক্যাশের ভবিষ্যত কার্যক্রম কিভাবে চলবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।  

শিওর ক্যাশের চাকরিচ্যুত কর্মীরা জানান, ৮ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি প্রথম ধাপে ঢাকা অফিসে কর্মরত প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা শামীমা আহসান, ন্যাশনাল সেলস ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন বিভাগীয় প্রধানসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ২০০ জনের মতো কর্মীকে ছাঁটাই করেছে শিওর ক্যাশ। এসব কর্মীদের অধিকাংশই বিক্রয় ও বিপণন এবং ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগে কাজ করতেন। এছাড়াও প্রধান কার্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের কর্মীও রয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে আরও কর্মী ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

শিওর ক্যাশের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের চাকরিচ্যুত এক কর্মী বলেন, আমাদের পারফরমেন্স ভালো ছিল। মানবসম্পদ বিভাগ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসা মন্দা। এই মুহূর্তে এত জনবল প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আপনাদের ডাকা হবে।

ফলে করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের এই সংকটে চাকরি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব কর্মীরা। অনেকেরই আয়ের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে সবকিছু বন্ধ। এই মুহূর্তে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানেও যোগদান করতে পারবেন না। অনেকেরই মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শুরু হবে মানবেতর জীবনযাপন।

এদিকে প্রযুক্তিখাতের দেশীয় মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠান পাঠাও-শিওর ক্যাশ একীভূত হওয়ার কথা ছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে পাঠাওয়ের মতো একটি ক্রমবর্ধমানশীল কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হলে হয়তো শিওর ক্যাশকে কর্মী ছাঁটায়ের বিষয়টি এখন ভাবতে হতো না।

এর আগে করোনা ভাইরাসের সাধারণ ছুটির মধ্যে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা চারটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, আশা করছি এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে সবাই আশ্বস্ত হবেন। সবাই এ প্রণোদনা থেকে উপকৃত হবেন। কাউকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হবে না। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

শিওর ক্যাশের চাকরিচ্যুত কর্মীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা দিয়েছেন প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সবাই উপকৃত হবেন। তখন শিওর ক্যাশের ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা গর্হিত অপরাধের শামিল। অবিলম্বে আমাদের চাকরি ফিরিয়ে না দিলে আমরা করোনা ভাইরাসের ছুটির পরে আন্দোলনে যাবো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানে ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় চুক্তি সই করেছে। এখন রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট এক কোটি ৩০ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মধ্যে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হচ্ছে।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা উপবৃত্তির টাকা তুলতে গিয়ে নানা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অপ্রতুল এজেন্ট, এজেন্টদের অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা এবং টাকা তোলার সময় এজেন্টরা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটছে।

শিওর ক্যাশের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিতে যেন কোনো ধরনের দুর্নীতি না হয় চুক্তি সইয়ের অনুষ্ঠানে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।

দেশের আর্থিক ও শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন চলমান করোনা দুযোগকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করে শিওর ক্যাশের মতো আর কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মীদের চাকরিচ্যুত করেছে তারা যেন ভবিষ্যতে সরকারের কোনো কাজ না পায়। এদের চিহ্নিত করে কালোতালিকাভুক্ত করা হোক।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শিওর ক্যাশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির অর্থ উপকারভোগীদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে পৌঁছে দেয়। অনিয়মের বিষয়ে এরআগেও প্রতিমন্ত্রী সতর্ক করেছেন। তারা যদি চলমান করোনা ভাইরাসের সংকটের কারণে কোনো কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে থাকে, তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করবো কি-না বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিওর ক্যাশের হেড অব মার্কেটিং কমিউনিকেশন মাশরুর হাসান মীম বাংলানিউজকে বলেন, দেশে আমাদের দুই কোটি গ্রাহকের সেবার মান বাড়াতে এবং প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য আমাদের বিক্রয় বিভাগটির কিছু অবকাঠামোগত পরিবর্তন এনেছি। ফলে কিছু পদ বিলোপ করতে হয়েছে। ১০০ কর্মী চাকরি হারিয়েছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক যে এই দুঃসময়ে এটি ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, গত ছয়-সাতমাস ধরে আমরা শিওর ক্যাশের সামগ্রিক দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছি। এর অংশ হিসেবে কোম্পানির নেতৃত্ব পর্যায়সহ বিভিন্ন বিভাগে বেশকিছু লোকবল বাড়ানো হয়েছে।

নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিওর ক্যাশ ২০১৫ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। শিওর ক্যাশ ব্যবহার করে গ্রাহক টাকা জমা ও উত্তোলন, ইউটিলিটি সেবার বিল পরিশোধ, রেমিটেন্স পাঠানো, স্কুল-কলেজের ফি পরিশোধসহ বিভিন্ন ধরনের আর্থিক লেনদেন করতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
এসই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।