ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনার কারণে গরু খামারিদের মাথায় হাত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২০
করোনার কারণে গরু খামারিদের মাথায় হাত

দিনাজপুর: বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দিনাজপুর জেলায়। দেশের শস্যের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে এবার গরু খামারিদের মাথায় হাত পড়েছে।

হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ও বড় দুধের কোম্পানিগুলোর উদাসীনতায় ফলে বন্ধ হতে বসেছে অসংখ্য গরু খামার। দুধ বিক্রি করতে না পারায় কম দামে গরু বিক্রি ও খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা।

দুধ বিক্রি করে গরুর খাদ্য দামও উঠতে না তাদের।  

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গড়ে প্রতিদিন জেলায় ৫০০ মেট্রিক টন গরুর দুধ উৎপাদন হয়।  

দিনাজপুর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছেন, শস্যের জেলা দিনাজপুরের প্রায় ১ হাজার ৩৫০টি গরু খামার নিবন্ধিত ও ৭ শতাধিক খামার অনিবন্ধিত রয়েছে। এসব খামারে ১৬ লাখ ৭৪ হাজার ২১৪টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ গাভী বা দুধ দেওয়া গরু রয়েছে। এই গরুগুলো থেকে খামারে গড়ে প্রতিদিন ৫০০ মেট্রিক টন দুধ পাওয়া যায়।  

করোনার কারণে গরু খামারিদের মাথায় হাত

দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী এলাকায় ১৬ বছর ধরে তুহিন ডেইরি ফার্ম নামের ব্যবসা করছেন মো. তুহিন আকতার। তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলা শাখা ডেইরি ফামার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।  

তিনি বাংলানিউজকে জানান, তার নিজস্ব ২টি গরুর খামার রয়েছে। এই ২টি খামারে তার গরুর সংখ্যা ৯০টি। শহরের বালুবাড়ী এলাকায় ১২ শতক জমির উপর ১টিতে ৫০টি গরু ও নয়নপুর এলাকায় ৬৬ শতক জমির উপর ১টি খামার রয়েছে ৪০টি গরু। তিনি গড়ে প্রতিদিন ৫০০ লিটার দুধ উৎপাদন করেন। কিছুদিন আগে আমার খামারের উৎপাদিন দুধ সম্পূর্ণ বিক্রি হয়ে যেত। যা দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান ও অন্যান্য কোম্পানিতে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসের কারণে আমার খামার থেকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি দুধ বিক্রি হয়। বাকি অর্ধেক দুধ অবিক্রিত রয়ে যায়। ক্রেতার অভাবে কয়েকদিন আগে তিনি ২০০ লিটার দুধ ড্রেনে ফেলে দিতে বাধ্য হন। করোনার প্রভাবের ফলে এ পর্যন্ত তার ৮ হাজার লিটার দুধ ব্র্যাক, প্রাণ, মিল্ক ভিটা, আড়ৎ ও সাধারণ ক্রেতাকে জোর করে বাকি দিতে বাধ্য হন। নাহলে খামারে উৎপাদিত দুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনিতে দুধের ক্রেতা নেই তার উপর গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে।  

তিনি আরও জানান, এক মাস আগে ৩৬ কেজির ভূসির বস্তা আমি কিনেছি ৯০০ টাকা। কিন্তু এখন সে ভূসির বস্তার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। ভুট্টা আগে ১৮ টাকা কেজি দরে কিনলেও বর্তমানে ৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও আটা আগে ২২ টাকা কেজি দরে কিনলেও বর্তমানে ২৮ টাকা এবং ব্র্যান আগে ১৭ টাকা দরে কিনেছিলাম, কিন্তু বর্তমানে ২৬ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। তার উপর আমার প্রতিষ্ঠানে ২০ জনের মত কর্মচারী রয়েছে। তাদের প্রতি মাসে গড়ে ১২ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়। আমি কিভাবে চলব? আমাকে তো এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। করোনার প্রথমদিকে আমার অবিক্রিত দুধগুলো ব্র্যাক, প্রাণ, মিল্ক ভিটা, আড়ৎ-এ বিক্রি করতাম। কিন্তু তারা এখন আমার কাছ থেকে দুধ কিনতে চাচ্ছেন না।  

খামারে দুধ কিনতে আসা শিক্ষক সুভাষ রায় বাংলানিউজকে জানান, আমি এই খামার থেকে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কেজি দরে দুধ নিয়ে যাই। কিন্তু কয়েকদিন ধরে খামারের কর্তৃপক্ষ আমাকে জোর করে আরও ১ থেকে ২ কেজি দুধ বেশি দিচ্ছে। আমি নিতে না চাইলে কর্তৃপক্ষ আমাকে বলে পরে টাকা দিয়েন। তাদের অনুরোধে আমাকে বাধ্য হয়ে বেশি করে দুধ নিতে হয়।  

করোনার কারণে গরু খামারিদের মাথায় হাত

দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনুর আলম বাংলানিউজকে জানান, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের নিবন্ধনভুক্ত খামারের সংখ্যা ১ হাজার ৩৫০টি, এছাড়াও ৭ শতাধিক খামার অনিবন্ধন রয়েছে। বর্তমানে করোনার প্রভাবে খামারগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এখানে আমাদের করার কিছু নেই। সরকার যদি খামারিদের কিছু করে তাহলে তো ভালো। এছাড়াও আমাদের অফিসের পক্ষ থেকে খামারিদের অবিক্রিত দুধ থেকে ক্রিম, ঘি, ছানা তৈরি করার জন্য উপদেশ দিচ্ছি। এতে করে খামারিরা নিজেদের ক্ষতির পরিমাণ কিছু কমে যাবে। জেলায় যানবাহনের চলাচল কমে যাওয়ায় পশু খাদ্য একটু শংকট দেখা দিয়েছে। আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবো।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।