ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সাগরে জেগে ওঠা চরে বনায়নের নামে অর্থ নিয়ে সড়কে বৃক্ষরোপণ

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
সাগরে জেগে ওঠা চরে বনায়নের নামে অর্থ নিয়ে সড়কে বৃক্ষরোপণ

ঢাকা: একটি প্রকল্প গ্রহণ করার সময় কোন বেইজলাইন সার্ভে ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই প্রতিবেদন ছাড়াই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন হয়েছে। ফলে প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

প্রকল্প গ্রহণকালীন চরের প্রকৃত অবস্থা কেমন ছিল তা জানা যায়নি। একইভাবে গত তিন অর্থবছরে ম্যানগ্রোভ বনায়নের জন্য উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন উপযোগী চর পাওয়া যায়নি। ফলে ডিপিপি অনুযায়ী বছরভিত্তিক কাঙ্ক্ষিত বনায়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

অথচ ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন চরসহ উপকূলীয় এলাকার বনায়ন’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন চরে বনায়ন। অথচ ডিপিপি বহির্ভূতভাবে চরে বৃক্ষরোপণের নামে প্রকল্প নিয়ে ফেনীর পরশুরাম ও সোনাগাজী উপজেলায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১২ কিলোমিটার সংযোগ সড়কে বাগান সৃজন করা এবং নতুনভাবে প্রকল্প এলাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে, যা ডিপিপির কর্মপরিকল্পনায় ব্যত্যয় ঘটেছে বলে জানায় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। ফলে বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে রয়েছে।

সরকারি তদারকি সংস্থার প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব চিত্র উঠে এসেছে।

ইতোমধেই আইএমইডির প্রতিবেদন বন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ‘বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন চরসহ উপকূলীয় এলাকার বনায়ন’ প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

চরের বদলে সড়কে বৃক্ষরোপণের পরও প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য এখনও পূরণ হয়নি। চলতি সময় পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ বনায়ন পরিকল্পনা ছিল। অথচ বাস্তব অগ্রগতি হচ্ছে ১৬ হাজার ৩৯৫ হেক্টর অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ২৮ শতাংশ কম। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়াতে হবে বলে দাবি করেছে বন অধিদপ্তর।

উপকূলের বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও কক্সবাজার জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ‘বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন চরসহ উপকূলীয় এলাকার বনায়ন‌’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়ন করছে বন অধিদপ্তর। প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১০৪ কোটি ৮০ লাখ ২৬ হাজার টাকা। প্রকল্পের সময় বাকি আছে মাত্র তিন মাস অথচ প্রকল্পের এখন অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। ফলে প্রকল্পের সময় আরও দেড় বছর বাড়ানো হবে বলে জানায় বন অধিদপ্তর।

প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে বিলম্ব, স্ট্রিপ বনায়নের ভূমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি সংক্রান্ত জটিলতা, ম্যানগ্রোভ বনায়নে উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন উপযোগী চর না পাওয়া, মাঠপর্যায়ের চাহিদা যাচাই না করে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নসহ বিভিন্ন কারণে ডিপিপি অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় বলে দাবি করেছে আইএমইডি।

চরের পরিবর্তে সড়কে বৃক্ষরোপণ প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক ও উপকূলীয় অঞ্চল বরিশালের বন সংরক্ষক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ খান বাংলানিউজকে বলেন, চরের পাশাপাশি প্রকল্পের ডিপিপিতে সড়কে বনায়নের কথা উল্লেখ আছে। এজন্যই সড়কে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি কম হয়েছে এ কথা সঠিক। মূলত জনবলের অভাবে কাজের অগ্রগতি কম হয়েছে।

তিনি বলেন, চরে পলি পড়ে চর জাগে আবার চর ভাঙে। যে কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি কম। প্রকল্পের অগ্রগতি কম হয়েছে। সঠিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে আরও দেড় বছর সময় লাগবে।  

সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রকল্পের ডিপিপিতে সংস্থান আছে মোট ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং এর বিপরীতে অবমুক্ত হয়েছে ৪৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা যা ডিপিপির সংস্থানের চেয়ে ৩২ কোটি ২২ লাখ টাকা বা ৬৮ শতাংশ কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের সর্বমোট ব্যয় ৪৩ কোটি ৪৮ টাকা যা প্রকল্পের ছাড়কৃত অর্থের ৯৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ৪১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। প্রতিবছর ডিপিপির অনুমোদিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বরাদ্দ চাওয়া হয়। কিন্তু প্রতিবছরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সম্ভব হয়নি।

প্রকল্পের আওতায় ৪০ হাজার বসতবাড়ির মধ্যে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ৩০ হাজার বাড়িতে চারারোপণ শেষ হওয়ার কথা। এর মধ্যে এই পর্যন্ত ২১ হাজার ৫১৪টি বসবাতিতে চারারোপণ করা হয়েছে।

আইএমইডি জানায়, পরিবীক্ষণকালীন কোন মনিটরিং প্রতিবেদন প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে পাওয়া যায়নি। প্রকল্প কর্মকর্তারা অনিয়মিতভাবে মাঠপর্যায়ের কাজ পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করেন। এমনকি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে কোন মনিটরিং টুল ব্যবহার করেন না। কর্মকর্তারা কখনো কখনো গুগল স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে মনিটরিং করেন। এমনকি গাছের জীবিত ও মৃত চারা গণনার জন্য মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তা কিংবা ওয়াচারের কাছে কোন লগ বই পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
এমআইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।