ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পেঁয়াজ সিন্ডিকেট: নজরদারিতে ৪ জেলা, নামছে গোয়েন্দা সংস্থা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
পেঁয়াজ সিন্ডিকেট: নজরদারিতে ৪ জেলা, নামছে গোয়েন্দা সংস্থা ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণাকে পুঁজি করে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তুলেছে একটি সুযোগসন্ধানী সিন্ডিকেট। কৃত্রিম সংকট তৈরি করা এই চক্রকে খুঁজে বের করতে পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জ জেলাকে বিশেষ নজরদারিতে রেখেছে সরকার।

গত বছরও চক্রটি কারসাজি করে ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছিল পেঁয়াজের দাম। তাই সুযোগসন্ধানী সিন্ডিকেটের সদস্যদের খুঁজে বের করতে মাঠে নামানো হচ্ছে সরকারের চারটি গোয়েন্দা সংস্থাকে। বর্তমানে ওই চার জেলাতে অন্তত ছয় লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এবার শুরু থেকেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তৎপর ছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি টিম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পেঁয়াজ মজুদের সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে যায়।

এসব টিম সরেজমিন পরিদর্শন ও গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জ— এই চার জেলায় অন্তত ছয় লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব জেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টিম জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক ও স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করবে। যাতে করে কোনোভাবেই ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে। এসব সুযোগসন্ধানী সিন্ডিকেটের সদস্যকে খুঁজে বের করতে এবার যৌথভাবে মাঠে নামছে সরকারের চারটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। চারটি গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে এ কাজটি করবে। বাজার মনিটরিংয়ে এরা নিয়মিত কাজ করলেও এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বাড়তি কিছু দায়িত্ব দিয়ে তাদের মাঠে নামানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

পেঁয়াজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, সম্প্রতি ভারত কোনো ধরনের পূর্বাভাস না দিয়েই হঠাৎ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে দেশের বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। তবে আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ কিনতে থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। এই মজুদ দিয়ে আগামী আড়াই থেকে তিন মাস চোখ বুজে চলা যাবে। বিকল্প বাজার থেকেও পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। তাই ক্রেতাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ না কেনার পরামর্শ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

ইতোমধ্যে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ট্রাকে করে ৩০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। পাশাপাশি ৩৬ টাকা কেজিতে অনলাইনের মাধ্যমেও পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে সরকারি এ সংস্থা। এছাড়া ভারত ও এর বিকল্প দেশ হিসেবে তুরস্ক, চীন, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি বাড়াতে পেঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে দেশের বাজারে অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের দাম। ৬০ টাকার দেশি পেঁয়াজের দাম মঙ্গলবার ১১০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। আর পাইকারিতে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে পেঁয়াজের কেজি হয় ৮৫ টাকা। কোনো কোনো পাইকার ৯০ টাকা কেজিতেও পেঁয়াজ বিক্রি করেন। এমন দাম বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে ভোক্তাদের মধ্যে বাড়তি পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়ে যায়।

রাজধানীতে পেঁয়াজের সব থেকে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকা। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। তবে আমদানি করা নষ্ট পেঁয়াজ কোনো কোনো ব্যবসায়ী ৪০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করছেন।

অপরদিকে বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত দুদিনের মতো সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। আর আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।

দেশে বছরে প্রায় ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। চলতি বছর এর বেশি উৎপাদন হয়েছে। তবে সংগ্রহ এবং সংরক্ষণে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়। ফলে প্রকৃত উৎপাদন ১৯ লাখ টনের বেশি। বাকিটা আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ভারত থেকে আসে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০ 
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।