ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রণোদনার ঋণ পাচ্ছে না ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২০
প্রণোদনার ঋণ পাচ্ছে না ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতীকী ছবি

ঢাকা: ব্যাংকের কঠিন সব শর্তের কারণে বেশির ভাগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই রয়ে গেছেন সরকারের প্রণোদনা সুবিধার বাইরে। জামানত ছাড়া উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে উৎসাহী নয় ব্যাংকগুলো।

এ অবস্থায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাবি জানানো হয়েছে ব্যাংকের বাইরে অর্থায়নের উৎস নিশ্চিত করারও।

ছোট ব্যবসা, অল্প পুঁজি, লাভ-লোকসানের হিসাব খুব বেশি নয়; দেশে এমন ক্ষুদ্র ও মাঝারি কুটির শিল্পের সংখ্যা ৭৭ লাখের বেশি। সক্ষমতা কম তাই করোনার ধাক্কা সবচেয়ে বেশি লেগেছে এই খাতে।

হিসাব বলছে, ৬৫ শতাংশ আয় কমেছে এসব ব্যবসায়ীদের। ফলে ৭৫ ভাগ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তা ব্যবসা বন্ধের ঝুঁকিতে পড়েছেন। সিএসএমই’র ক্ষেত্রে এই হার ৫৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ অ্যান্ড লিডিং ডেভলপমেন্টের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে সিটিজেন প্লাটফর্ম ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস-এর আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ছোট, মাঝারি এবং বড় শিল্পের ভেতরে ক্ষুদ্র শিল্প, সেটা যদি কুটির পর্যায়ের হয়, মাইক্রো পর্যায়ের হয় অথবা ছোট বা মাঝারি হয়— করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অন্যদের চেয়ে তাদের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। তাদের আগামী দিনের চিন্তা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিটাও অন্যদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে নেতিবাচক। তারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় এবং শঙ্কা দেখছে। ঝুঁকির মধ্যে আছে। এই জিনিসটা খুব পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে।

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তাদের সহায়তায় এপ্রিল মাসেই সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে চলতি মূলধন হিসেবে। কিন্তু আগস্ট পর্যন্ত ঋণ পেয়েছেন মাত্র ১১ হাজার ১৮৩ জন উদ্যোক্তা। ঋণ বিতরণ হয়েছে চার হাজার ১২০ কোটি টাকার, যা মোট প্যাকেজের ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মাত্র।

ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা চৌধুরী বলেন, জুলাইয়ের শেষে ঈদের পরে আগস্টের প্রথম দিকে ব্যাংক থেকে আমাদের যোগাযোগ করতে বলা হয়। যোগাযোগ করার পরে আমাদের মর্টগেজ নিয়ে যেতে বলা হলো ঋণ নেওয়ার জন্য। যেহেতু অন্য ব্যাংকে ঋণ আছে তাই মর্টগেজ ছাড়া ঋণ দেওয়া যাবে না জানিয়ে দিলো।

এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব এসএমই আব্দুল মোমেন বলেন, ঋণ দিতে প্যাকেজের মধ্যে কোথাও জামানত দিতে হবে, ডিপোজিট দিতে এরকম কোনো  বাধ্যবাধকতা নাই। এখানে ব্যাংকের পলিসি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। সুতরাং কোনো কোনো ব্যাংকের পলিসি এখানে ভিন্ন থাকতে পারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন বড় ব্যবসায়ীদের মতো বেশির ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় তাদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ হলেও বাইরে থাকছে ক্ষুদ্র এবং অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শাহ মাহমুদ বলেন, আমি যখন মাইক্রো কটেজের কথা বলছি মিডিয়ামটাও এখানে নিয়ে আসছি। মিডিয়ামদের ব্যাংকের সঙ্গে যে সম্পর্ক আছে ক্ষুদ্র এবং অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওই সম্পর্কটা নাই।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে বলে দিতে পারে সিএসএমই খাতের জন্য জামানত লাগবে না। এটা করা গেলে সিএসএমই খাতে তারল্যের প্রবাহটা বাড়তে পারে বলে আমি মনে করি। এটা না করলে ব্যাংকগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঋণ বিতরণ করবে না।

সেই সাথে তাদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করতে এনজিওর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ এবং এসএমই বোর্ড গঠন করতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বড় গ্রাহকদের নিয়ম মেনে কাগজপত্র দাখিল করে ঋণ নিতে হচ্ছে। ছোটদের বেলায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। ঋণ পেতে হলে ন্যূনতম কিছু কাগজপত্র তো জমা দিতেই হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২০
এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।