ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডিএসইর ‘লোক দেখানো’ নোটিশ নিয়ে প্রশ্ন!

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২০
ডিএসইর ‘লোক দেখানো’ নোটিশ নিয়ে প্রশ্ন!

ঢাকা: দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত চার মাসে (৩১ মে-৩০ সেপ্টেম্বর) ১৯টি কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। নোটিশের জবাবে প্রত্যেকটি কোম্পানি জানিয়েছে, শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে তাদের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

দাম বাড়ার কারণ জানে না কোম্পানিগুলো।  

ডিএসইর এমন কারণ দর্শানোর নোটিশকে গতানুগতিক বলছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, এই নোটিশ ‘লোক দেখানো’ ছাড়া কিছুই নয়।

একাধিক বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এমনটি জানিয়েছেন।

বিনিয়োগকারীরা জানান, কোম্পানিগুলোর গতানুগতিক জবাব এবং ডিএসই দায় সারা চিঠির খুব একটা গুরুত্ব নেই। একই রকম চিঠির একই উত্তর। এখানে মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন তারা।

তাদের মতে, শুধু নোটিশ দিলেই হবে না, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মনিটরিং করতে হবে। এর মাধ্যমে কোনো অসঙ্গতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে  নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লাহ নাঈম বাংলানিউজকে বলেন, “গৎবাঁধা প্রশ্নের, গৎবাঁধা উত্তর। ডিএসইর কারণ দর্শানোর নোটিশ একই রকম এবং কোম্পানিগুলোও সবাই একই উত্তর দেয়। তাই গৎবাঁধা চিঠির খুব একটা গুরুত্ব থাকে না। ”

তিনি বলেন, “কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকলে সেই কোম্পানিকে চিঠি দেয় ডিএসই। কিন্তু একই কোম্পানির শেয়ারের দাম যদি অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, সে ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেই তাদের। অথচ শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমলেও তো কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ দিতে পারে ডিএসই। কিন্তু সেটি তারা দেয় না। এতে করে বোঝা যায়, তারা ভারসাম্য রক্ষা করছে না। তাই এই গৎবাঁধা বিষয় থেকে ডিএসইকে বের হতে হবে। ”

এদিকে বিনা কারণে লোক দেখানো নোটিশ না দিয়ে প্রয়োজনে ডিএসই দক্ষ অডিট টিমের মাধ্যমে সূক্ষ অডিট সম্পন্ন করে কোম্পানির মূল ফান্ডামেন্টাল ভ্যালু বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশীদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একটি বড় রদবদল হয়েছে। বর্তমান কমিশন দক্ষ এবং নিষ্ঠাবান জনবল দ্বারা গঠিত। কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল অবস্থা খুব ভালো হলেও তাদের মূল্য ফেসভ্যালুর থেকে অনেক নিচে, যাদের মূল্য স্বাভাবিকভাবে ফেস ভ্যালুতে থাকা উচিত। অথচ ফেসভ্যালুর নিচে থাকা শেয়ারগুলোর মূল্য যখন বৃদ্ধি হতে থাকে তখন ডিএসই বিনা কারণে নোটিশ দিয়ে বাজারকে বাধাগ্রস্ত করেন। গতানুগতিকভাবে কোম্পানিগুলোকে তাদের আসল রূপ লুকিয়ে একইভাবে কোয়ারির উত্তর দিয়ে আসছে। তাই আমরা ডিএসইকে বিনীত অনুরোধ করি, শুধু বিনা কারণে লোকদেখানো নোটিশ না দিয়ে প্রয়োজনে ডিএসই দক্ষ অডিট টিমের মাধ্যমে সূক্ষ অডিট সম্পন্ন করে কোম্পানির মূল ফান্ডামেন্টাল ভ্যালু বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরুন।

তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লোকদেখানো কোয়ারি না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, “ঢালাওভাবে নোটিশ না পাঠিয়ে যদি কোনো কোম্পানির লেনদেন অস্বাভাবিক মনে হয়, সেক্ষেত্রে সেই কোম্পানিকে নজরদারিতে এনে তাদের লেনদেন খতিয়ে দেখা উচিত। ”

ডিএসই নোটিশ পাঠানো কোম্পানিগুলো মধ্যে রয়েছে ইনফর্মেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, ফু-ওয়াং ফুড, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেঘনাপেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেড, সাভার রেফ্রিজারেটর লিমিটেড, বেক্সিমকো সিন্থেটিকস লিমিটেড, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, জিলবাংলা সুগার মিলস লিমিটেড, ফাইন ফুডস লিমিটেড, জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, কেয়া কসমেটিকস, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) ও নিটল ইন্স্যুরেন্স।

অপরদিকে, শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় ১৯ কোম্পানির মধ্যে দুটি কোম্পানি শেয়ার লেনদেন স্থগিত করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২০
এসএমএকে/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।