ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রবাসী আয় বাড়লেও কর্মসংস্থান নিয়ে শঙ্কা

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২০
প্রবাসী আয় বাড়লেও কর্মসংস্থান নিয়ে শঙ্কা

ঢাকা: করোনার কারণে বিদেশ থেকে প্রায় আড়াই লাখ কর্মী দেশে ফিরলেও প্রবাসী আয়ে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি বরং বেড়েছে। তবে আগামী দিনগুলোতে দেশে কর্মসংস্থানের বড় সঙ্কট সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে অদূর ভবিষ্যতে প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরালো করতে হবে। ফিরে আসা কর্মীদের আবারও বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত ডাটাবেইজ তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের ঋণ প্রাপ্তি ও প্রক্রিয়া সহজ করে মন্ত্রণালয় ঘোষিত ৭০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

গত সাত মাসে (এপ্রিল থেকে অক্টোবর) মাসে বিশ্বের ২৯টি দেশ থেকে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯০ জন প্রবাসী কর্মী। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৭ হাজার ৯৬৩ জন নারী ২৭ হাজার ৮২৭ জন। আর বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে দুই লাখ ১০ হাজার ৯১ জন ও আউটপাস নিয়ে ৩৫ হাজার ৬৯৯ জন ফিরে এসেছেন।

শুধু করোনার কারণেই এসব কর্মীরা দেশে ফিরেছেন এমনটি নয়। কাজের বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, আকামা বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবৈধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণেই তারা দেশে ফিরেছেন। অনেকে আবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউট পাস নিয়েও দেশে ফেরত এসেছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৮ হাজার ৮২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩.২৪ শতাংশ বেশি।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবরে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ৬ হাজার ১৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০২০-২০২১ অর্থবছরের অক্টোবরে দেশে ২,১১২ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। কিন্তু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১,৬৪২ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের দেশের কর্মীরা প্রতিমাসেই বিভিন্ন কারণে ফেরত আসছে। তবে করোনার কারণে চাকরিচ্যুত হয়ে কতোজন ফেরত এসেছে সেটা জানার বিষয়। সরকার তাদের নিয়ে একটি ডাটাবেইজ তৈরি করছে। স্বাভাবিকভাবে যারা ফেরত এসেছেন তারা আবার যেতে পারবেন। কিন্তু কাগজপত্র না থাকলে যাওয়ার সুযোগ নেই। ”

তিনি বলেন, “আমাদের এতো কর্মী ফেরত আসার পরও প্রবাসী আয়ে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং করোনাকালে আমাদের রেমিট্যান্স বেড়েছে। তবে যে বিষয়টি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে সেটা হলো, যারা বিভিন্ন দেশ থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে চলে এসেছেন এনেছেন তারা কী করবেন। দেশে কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দেবে। ”

তিনি জানান, প্রতিবছর ৭/৮ লাখ কর্মী বিদেশে যায়। কিন্তু এ বছর দেড় লাখও যেতে পারেনি। আগামী বছর নতুন করে আরও ৮ লাখ যোগ হবে। ফলে কর্মসংস্থান খাতে বড় ধরনের অসামজস্যপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, “করোনার কারণে শ্রমবাজার তথা অভিবাসন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদেশে যে এক কোটি অভিবাসী কর্মী আছেন, তারা যেন চাকরি না হারান সে জন্য সরকারকে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ফেরত এসেছেন তাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ”

দেশে ফেরা কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে করোনাসহ বিভিন্ন কারণে কাজ না থাকায় সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন ৬৮ হাজার ৬৪৭ জন। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেশে ফিরেছেন ৬৪ হাজার ২০৯ জন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২০
জিসিজি/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।