ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বগুড়ায় দুই মোকামে প্রতি হাটবারে বিক্রি হয় ৪৫ ট্রাক কলা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২০
বগুড়ায় দুই মোকামে প্রতি হাটবারে বিক্রি হয় ৪৫ ট্রাক কলা বিক্রির জন্য কলা কেটে এনে স্তুপ করা হচ্ছে। ছবি: কাওছার উল্লাহ আরিফ

বগুড়া: বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ফাঁসিতলা ও চন্ডীহারায় কলার দুই মোকামে প্রতি হাটবারে বিক্রি হয় প্রায় ৪৫ ট্রাক কলা। এর বাজারমূল্য কোটির টাকারও বেশি।

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে সপ্তাহে দুই দিন করে বসে কলার জমজমাট হাট। এ হাট থেকে ব্যাপারিরা কলা কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন।

সোমবার (৯ নভেম্বর) জেলার ফাঁসিতলা কলার হাট ঘুরে দেখা যায়, কাকডাকা ভোরে মোকামে আসতে থাকে কলা বোঝাই ভ্যান-ভটভটিসহ বিভিন্ন পরিবহন। পরিবহন থেকে কলার ঘাউর বা কান্দি নামিয়ে হাটের নির্ধারিত স্থানে সুন্দরভাবে সাজিয়ে বসেন কলা চাষিরা। এরপর শুরু হয় কলা বেচাকেনার দরদাম।

বেলা গড়াতেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মোকাম। দুপুর পর্যন্ত চলে বেচা-কেনা। আশপাশ ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারিদের ছোটাছুটি, তোড়জোড় আর হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠে কলার মোকাম। চাষিরা তাদের ন্যায্যদাম পেলেই বিক্রি করে দিচ্ছে কাঁধি-কাঁধি কলা। আর কলার ব্যাপারিরা চাষিদের সঙ্গে দাম ঠিক করে গাড়িতে তোলার জন্য কলার কাঁধি জড়ো করছেন নির্দিষ্ট স্থানে।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মোকামতলা এলাকার আগে ও পরে ফাঁসিতলা এবং চন্ডিহারা কলার মোকামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটবারে সকাল থেকে কলা এনে চাষিরা মহাসড়কের দুই পাশে কলার কাঁদি বিছিয়ে ও স্তুপ করে সাজিয়ে রেখেছেন। ব্যাপারিরা কলা কিনতে চাষিদের ঘিরে দরদাম করছেন। বাজার চড়তি থাকায় চাষিরা শুরুতে বেশি দাম চেয়ে বসছেন। তারাও যথাসাধ্য দর কষাকষি করে কলা কিনছেন।

ব্যাপারিরা অনেক সময় দাম বলেই কলার কাঁদি ধরে টানাটানি করছেন ও হাতে টাকা গুজিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আশানুরূপ দাম মিললে চাষিরা কলা ছেড়ে দিচ্ছেন আর না পেলো বেঁকে বসছেন। ফলে টানাটানি করেও কোনো লাভ করতে পারছেন না ব্যাপারিরা।

সাদিকুর রহমান, ধলু মিয়া, রাঙ্গা প্রামাণিকসহ একাধিক ব্যাপারি বাংলানিউজকে জানান, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ফাঁসিতলা ও চন্ডীহারায় কলার প্রতি হাটে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ ট্রাক কলা ব্যাপারিরা কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন।

তারা জানান, বর্তমানে প্রতি ঘাউর অনুপম কলা ৫শ থেকে ৬শ টাকা, চিনি চাম্পা ৩শ থেকে ৪শ টাকা এবং সাগর কলা ২শ থেকে ৩শ টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার ফাঁসিতলা এবং শনিবার ও বুধবার বসে চন্ডীহারা হাট। এরমধ্যে ফাঁসিতলা হাটে চন্ডীহারার চেয়ে অনেক বেশি কলার আমদানি হয়।

তারা আরও জানান, এই দুই মোকাম থেকে কলা রাজধানী ঢাকাসহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রংপুর, লালমনিরহাট, টাঙ্গাঈল, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোরসহ দূর-দূরান্তের বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা-উপজেলা শহরে চলে যায়। প্রতি ট্রাকে গড়ে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার কলা লোড হয়ে থাকে। তবে পরিবহন ভাড়া অতিরিক্ত হওয়ায় লাভের মুখ তেমন দেখতে পায় না বলে অভিযোগ করেন অনেক ব্যাপারি।

এনামুল হক, ইব্রাহিম ভূইয়া, ইদ্রিস আলী, মোজাম মিয়াসহ একাধিক কলা চাষি বাংলানিউজকে জানান, ফাঁসিতলা মোকাম থেকে প্রত্যেক হাটবারে গড়ে ৩০ ট্রাক ও চন্ডীহারা থেকে গড়ে ১৫ ট্রাকের মতো কলা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে।

তারা জানান, কলার মূল মৌসুম চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস। এ সময় এই দুই মোকামে ব্যাপক পরিমাণ কলার আমদানি হয়। ওই সময় এখান থেকে প্রতি হাটবারে প্রায় শতাধিক ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায় বলেও জানান চাষিরা।

চাষি জসিম মিয়া বাংলানিউজকে জানান, হাটে অনুপম কলা নিয়ে এসছেন তিনি। মোট ৪০ শতক জমিতে কলা চাষ করেছেন। সোমবার ভোর রাত ৪টা থেকে দুইজন শ্রমিক নিয়ে বাগানের কলার কাঁদি কাটার কাজ শুরু করেন। প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ভ্যানযোগে হাটে কলা নিয়ে এসছেন। নিজের পরিশ্রম বাদ দিয়েই দুই শ্রমিককে দিতে হয়েছে ৭০০ টাকা।

প্রতি হাটবারে বাগান থেকে কলার কাঁধি আনার জন্য আগে থেকেই পরিবহন ভাড়া করে রাখতে হয়। দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া মিটিয়ে নিতে হয় চালকদের সঙ্গে। কলার মূল মৌসুম চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠতে পরিবহন ভাড়ায় অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় বলে মন্তব্য করেন অনেক চাষি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কলা সারাবছরই উৎপাদন হয়ে থাকে। এ জেলার চাষিরা অনুপম ও চাম্পা কলা বেশি চাষ করে থাকেন। বাৎসরিক হিসাব অনুযায়ী বগুড়া জেলায় বছরে প্রায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে কলা উৎপাদন হয়ে থাকে। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি হেক্টর জমিতে কলা উৎপাদন হয়ে থাকে সাড়ে ১৯ টন। এর মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ২০ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন। বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ ও সদরের চাষিরা বেশি কলা উৎপাদন করে থাকেন বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।