ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আমরা দেশের সেরা ব্র্যান্ড হতে চাই: সোহেল কিবরিয়া

বিজনেস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
আমরা দেশের সেরা ব্র্যান্ড হতে চাই: সোহেল কিবরিয়া

আমরা দেশের সেরা ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে চাই। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে মিনিস্টার সবসময়ই একটি আলাদা অবস্থানে থাকতে চেয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন সোহেল কিবরিয়া।

তিনি বলেন, মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রাহকদের নিজেদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা শুধু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিপণন করতে চাই না। আমরা দেশ, দেশের মানুষ এবং দেশের সার্বিক উন্নতির দিকে লক্ষ্য রেখে বিপণন ব্যবস্থাকে সাজিয়েছি। এতে করে ব্র্যান্ড ইমেজ যেমন তৈরি হবে, তেমনি দেশেরও উন্নয়ন হবে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে এভাবেই মিনিস্টার-মাইওয়ান নিয়ে  নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি। এসময় তিনি তার জীবনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

১. জন্মস্থান, তারিখ, ছেলেবেলায় বেড়ে ওঠা, কৈশোর কীভাবে কেটেছে?
১৯৮৫ সালের ২১ জুলাই বাগেরহাটের ঘষিয়াখালী গ্রামে আমার জন্ম। ৬ বছর বয়স পর্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা হয় নানা বাড়িতেই। লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিভিন্ন সংস্কৃতি চর্চা, স্কাউটস, বিএনসিসি ইত্যাদি বিষয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল কিশোর বয়স থেকেই।  

২. পড়াশোনা, ক্যারিয়ার নিয়ে কি প্ল্যান ছিল?
বিজনেস নিয়ে পড়াশুনা করেছি। সাবজেক্ট পছন্দমত না পেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশুনা করেছি। ক্যারিয়ার প্ল্যান মূলত ছিল একাউন্টস প্রফেশনাল অর্থাৎ সিএ, সিএমএ এর ইচ্ছা থাকলেও ম্যানেজমেন্টে পড়াশুনা করেছি। অনার্স পাশ করার পরে আইসিএমএ তে ভর্তি হই। সেখানে কিছুদিন পড়াশুনা চালানোর পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করি। বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে আইসিএমএ সম্পন্ন করা হয় নি। মূলত একাউন্টসে কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও পরবর্তীতে সেটা আর হয়ে ওঠেনি।  

৩. মিনিস্টারের আগে কি কোথাও জব করেছেন?
মিনিস্টারের আগে একটি ফাইন্যান্স কোম্পানিতে কাজ করেছি। সেখানের একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে এ ছিলাম।
এখানে অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই আসা হয়েছে। এখানের এইচআর এ কাজ করা এক বন্ধুর মাধ্যমে আমি এখানে সিভি জমা দেই। এরপর এইচআর ডিপার্টমেন্টেই কাজ শুরু করি। কিছুদিন পরে মার্কেটিং এর কিছু এসাইনমেন্ট আমার হাতে আসে। সেখানে ভাল পারফরমেন্সের পর ম্যানেজমেন্ট আমাকে ব্র্যান্ডিং এ নিয়ে আসে।

৪. ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা কী?
আমি যেহেতু ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছি, তাই এই দিকেই আমি নিজের একটি পরিচয় তৈরি করতে চাই। এর মাধ্যমেই আমি দেশের বুকে আমার ব্র্যান্ডকে একটি সুদৃঢ় স্থানে নিয়ে যেতে চাই। যা দেশ ছাপিয়ে বিদেশের মাটিতেও সমাদৃত হবে।  

মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপ নিয়ে তিনি বলেন

১। মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে আলাদা?
অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে মিনিস্টার সবসময়ই চেয়েছে আলাদা একটি অবস্থানে থাকতে। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সবসময় ন্যায্যমূল্যে সব থেকে উন্নতমানের পণ্যটি গ্রাহকের হাতে তুলে দিতে চেষ্টা করি। আর আমরা আমাদের গ্রাহকদের সার্ভিস দেওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি।
 
২। দেশীয় পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপ কি ধরনের বিশেষ কর্মপন্থা অবলম্বন করে?
দেশীয় পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে আমরা একটু আলাদা পন্থা অবলম্বন করে থাকি। আমরা মূলত প্রথমে আমাদের টার্গেট কাস্টমার নির্বাচন করি এবং এরপরই আমাদের বিজ্ঞাপন কৌশল তৈরি করি। এছাড়াও প্রথাগত মিডিয়া ব্যবহার করার পাশাপাশিও ট্রাফিক পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশের মতো সরকারি সংস্থাকে সাহায্যের মাধ্যমেও আমরা মানুষের মনে একটি জায়গা করে নিচ্ছি।

৩। মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আসলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তো অবশ্যই থাকতে হবে। একটি ব্র্যান্ডের এতো বড় দায়িত্ব যখন কারও কাঁধে আসে তখন তাকে অবশ্যই সঠিক পরিকল্পনা অবলম্বন করতে হয়। আমি চাই শুধু নাচ-গানওয়ালা বিজ্ঞাপনের প্রথা থেকে বের হয়ে একদম ব্যতিক্রম সব আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে চাই। এমন সব আইডিয়া যা মানুষের মনে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান কররে। আর এভাবেই আমরা দেশের সেরা ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে চাই।  

৪। মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপরে বিপণন করার ক্ষেত্রে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
শুধু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে আমরা বিপণন করতে চাই না। আমরা দেশ, দেশের মানুষ এবং দেশের সার্বিক উন্নতির দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের বিপণন ব্যবস্থাকে সাজিয়েছি। এতে করে ব্র্যান্ড ইমেজ যেমন তৈরি হবে, তেমনি দেশেরও উন্নয়ন হবে।

৫। মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের সঙ্গে আপনার কাজ করার অভিজ্ঞতা/অনুভূতি কেমন?
অনুভূতির কথাটি বলতে গেলে বলতে হয় যে, দীর্ঘ দিন একটি জায়গায় কাজ করতে করতে এখানে একটি একাগ্রতা তৈরি হয়, নিজস্বতা বলতে কিছু থাকে না। কোম্পানি বা ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে নিজের অস্তিত্ব জড়িয়ে যায়। একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করার সুযোগ হয়। আমি এখানে অনেকটা সময়, প্রায় ৮ বছর ধরে কাজ করে আসছি। এতদিন ধরে কাজ করার ফলে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার নামটি অনেকাংশেই জড়িয়ে গিয়েছে। ব্যক্তির পাশাপাশি এটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিভূত হয়েছে। আমরা যখন আমাদের কাজগু্লোর দিকে তাকাই তখন অনুভূতিটা অনেক আপ্লূত থাকে। আরও ভালো লাগে যখন দেখি নিজের একটি কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে তখন অনুভূতিটা এমন থাকে যে নিজের কাজ, নিজের সৃষ্টি। খুব আপন লাগে কাজ গুলোর সঙ্গে।  

৬। পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে কি প্রতিকূলতা সম্মুখীন হচ্ছেন?
পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিকূলতা থাকে। যেমন- সরকারের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাপার থাকে। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও অনেক রকম বাধ্যবাধকতা থাকে যেগুলো আমাদেরকে পার করতে হয়। তাছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থাৎ আমাদের সমসাময়িক বা সমজাতীয় প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতেও অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। যা পার করা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।  

৭। করোনাকালীন দুঃসময় কিভাবে মোকাবিলা করেছেন?
করোনাকালীন সময়টা সবার জন্যই অনেক দুঃসাধ্য ছিল। গোটা বিশ্ব একটি স্থবির অবস্থায় পরে গিয়েছিল। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। আমাদের দেশ যেহেতু একটি ছোট দেশ; আমাদের অর্থনীতিটাও কিছুটা দুর্বল। সেক্ষেত্রে আমরাও অনেকাংশেই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, অনেক মানুষের চাকুরী চলে গিয়েছিল। অর্থনীতি একটি বিপর্যস্ত অবস্থায় চলে গিয়েছিল যা দিন দিনই বাড়ছে। আমরা বর্তমানে করোনার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এই দুঃসময় মোকাবিলা করার জন্য আমরা যা করছি; তা হচ্ছে-আমরা একাগ্রতা নিয়ে কাজ করছি। মার্কেটিং এ যারা সেলস এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা ডোর-টু-ডোর কাজ করছেন। এমনকি যেই ডিপার্টমেন্ট এর যেই কাজ করার কথা না; তারাও পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কাজ করছে। যেমন- একাউন্ট ডিপার্টমেন্ট এর কিন্তু সেলস এর কাজ করার কথা না; তারাও পার্সোনালি সেলস এর কাজ করছেন। আমরা পারসোনাল সেলসটা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ডিজিটালি আমরা বিজ্ঞাপন বাড়াচ্ছি। যত কম বাজেটে সহজে মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় আমরা সেই সমস্ত কর্মপন্থা অবলম্বন করছি। আমরা আমাদের ইরেগুলার বাজেটগুলো অর্থাৎ যেই বাজেটগুলো না করলেই নয় সেই বাজেটগুলো আমরা কমিয়ে দিয়েছি। যেই বাজেটগুলো আমাদের তেমন প্রয়োজন নেই, সেগুলো আমরা কমিয়ে নিয়েছি এই সময়টাকে মোকাবিলা করার জন্য। ক্রেতার সুবিধার জন্য আমরা আমাদের প্রোডাক্টের দামও কমিয়ে দিয়েছি। নুন্যতম প্রফিট রেখে আমরা বাজারে আমাদের প্রোডাক্ট দিচ্ছি। এছাড়া আমরা এসময়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য বাজারে আনার চেষ্টা করছি। এর পাশাপাশিও বিভিন্ন হিউম্যান কেয়ার প্রোডাক্ট আমরা বাজারে নিয়ে আসছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।