ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পেঁয়াজ আমদানিতে আবারও শুল্ক আরোপের চিন্তা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২১
পেঁয়াজ আমদানিতে আবারও শুল্ক আরোপের চিন্তা

ঢাকা: পেঁয়াজ আমদানিতে আবারও ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

রোববার (০৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন টিপু মনুশি।

গত বছরের মার্চ মাসে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজ সংকটে পড়ে দেশ। তখন অন্য দেশ থেকে আমদানি সহজ করতে পেঁয়াজের ওপর ধার্য ৫ শতাংশ শুল্ক মুক্ত করে দেয় সরকার।

এখন পেঁয়াজের ওপর ৫ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা প্রস্তাব করব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কী করা যায় তারা সেটা করবে। যদি মনে করে যে, দেয়াটা (শুল্ক) ভালো তাহলে দেবে।

রোববার বিকেলে কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমার যেটা সাজেশন তাদের প্রতি এবং আপনাদেরও জানাতে চাই— ভারতের পেঁয়াজ আমরা নেব কি নেব না, কী পরিমাণ ডিউটি আরোপ করব, এটা যেন আমাদের উৎপাদকদের কথা বিবেচনা করে এবং ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়। কোনো অবস্থাতেই যাতে উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাদের সাপোর্ট না দিলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরও খারাপ অবস্থা হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় আরেকটা কথা হলো, ভারত যে সময় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল সেই সময় আমরা তুরস্ক, মিশর, চীনসহ আরো অনেক দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছি। তখন যে ৫ শতাংশ ডিউটি ছিল সেটা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যাতে একটু কম দামে পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এখন যদি ভারতের পেঁয়াজের জন্য ডিউটি আবার বসাতেও হয়। তাহলে যে এলসিগুলো আগে ওপেন করা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তারা যেন এর আওতার বাইরে থাকে। তারা পেঁয়াজ আনার পর লাভ করতে পারেনি, লোকসান করেছে, সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে আমরা লক্ষ্য রাখছি আমাদের কৃষকরা যেন মার না খায়।

আমদানি শুল্ক বাড়বে কিনা জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, আজকে আলোচনা করে ঠিক করব আমরা কী করব। যদি দেখি ভারতের পেঁয়াজ ৩৯ টাকায় ঢুকছে। সেটা আমাদের জন্য আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত তাদের দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে তারা পেঁয়াজ রপ্তানি কখনো বন্ধ করে, কখনো খুলে দেয়। এখন তারা খুলে দিয়েছে। গত মার্চের মাঝামাঝিতে বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা আমাদের কৃষকের স্বার্থটা আগে দেখব। পাশাপাশি ভোক্তাদেরও দেখব। আমাদের আশা আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।

তিনি বলেন, ভারত আজকে পেঁয়াজ ছেড়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ ঢুকছে ৩৯ টাকা দরে। আর ঢাকার বাজারে সেই পেঁয়াজ পাইকারিতে ৪৫ টাকা, আর খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। তবে আমাদের পেঁয়াজ কিন্তু সেই রেটেই আছে। পাশাপাশি ভারতের পেঁয়াজ ঢুকলেও সমস্যার কিছু নেই। আজ বিকেলে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন, সেখানে আলোচনা করে এ বিষয় ফয়সালা করবেন।

পেঁয়াজ সংকটের কারণে আমদানি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের ক্রাইসিসের কারণে আমদানি হবে এমনটা নয়, নিয়মিত আমদানি হয়। আমাদের দেশে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ পেঁয়াজ ভারত বাদে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি হচ্ছে, পাশাপাশি মুরি কাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে—আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আগামী মার্চ মাসে যে পেঁয়াজ আসবে সে পর্যন্ত কোনো সমস্যা হবে না। আমরা পর্যবেক্ষণে রাখব যদি আমদানি করতে হয় করব। এখন পেঁয়াজ উঠবে সেই সময় আমদানি করলে কৃষকরা দাম পাবে না। আমাদের ধারণা পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৮ টাকা। সেটা যদি কৃষকরা ২৫ টাকায় বিক্রি করতে না পারে তাহলে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। আর সেই পেঁয়াজ ঢাকা পর্যন্ত আসতে ৪০ টাকায় ভোক্তারা পাবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় বলেছিলো তিন লাখ টন উৎপাদন বাড়ানো হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের ঘাটতি থাকে ৮ থেকে ৯ লাখ টন। গত বছর চাপের মুখে উৎপাদন এক লাখ টন বাড়ানো হয়েছিল। তিনি (কৃষিমন্ত্রী) আশাবাদী এ বছর তিন লাখ টন হবে, আমরাও আশাবাদী।

টিপু মুনশি বলেন, আমাদের দেশে দাম বাড়ে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে। দীর্ঘ মেয়াদে পেঁয়াজের সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। তাহলে দুই তিনটা রাস্তা রয়েছে। একটা হলো জুন-জুলাই মাসে উৎপাদন হয়, এমন ধরনের পেঁয়াজের বীজের ব্যবস্থা করতে হবে। আর বেশ কিছ কোল্ডস্টোরেজ করতে হবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য। একটা মাত্র অনুমতি নিয়েছে ৪০ হাজার টন রাখার জন্য। এরকম গোটা ১০টা করতে পারলে তাহলে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। খুব ভালোভাবে যদি আগানো যায় তাহলে তিন বছরের মধ্যে আমরা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে যাব।

** নিত্যপণ্যের দামে কারসাজি করলে ব্যবস্থা: বাণিজ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।