ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

টমেটোর রাজ্যে এখন কৃষকদের আস্থার অপর নাম 'প্রাণ'

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২১
টমেটোর রাজ্যে এখন কৃষকদের আস্থার অপর নাম 'প্রাণ' টমেটো হাতে চাষি। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ীকে বলা হয় টমেটোর রাজ্য। আর বলা হবেই বা না কেন?

দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টমেটো উৎপাদন হয়- রাজশাহীর বরেন্দ্রভূমি খ্যাত এই উপজেলায়।

প্রায় দুই দশক ধরে গোদাগাড়ী সদর ও পদ্মার চরে টমেটোর চাষ হচ্ছে। এখানে টমেটো চাষে নিরব বিপ্লব ঘটে গেছে।

প্রতি শীত মৌসুমেই বিপুল পরিমাণ টমেটো উৎপন্ন হয় এখানে। কয়েক হাজার চাষি কেবল টমেটো চাষ করেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। চলতি মৌসুমে টমেটোর আশানুরূপ ফলন হওয়ায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় ক্ষেতের লাল-সবুজ টমেটো কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

রাসায়নিক সার ছাড়াই উৎপাদিত টমেটো জেলার চাহিদা মিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। আর তাদের কণ্টকাকীর্ণ পথকে আরও মসৃণ করেছে প্রাণ গ্রুপ। গোদাগাড়ীর টমেটোর রাজ্যে বাণিজ্যিকভাবে টমেটো সস, জ্যাম-জেলিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছে প্রাণ। আর প্রাণের এই কারখানার সাথে চুক্তিভিত্তিক টমেটো চাষে সুদিন ফিরেছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, গোদাগাড়ীর টমেটো এখন জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। রাজশাহীতে শীত মৌসুমে টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ থাকে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে কেবল গোদাগাড়ী উপজেলাতেই ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়। যেখান থেকে ৭০ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদন হয়। ফলে আমের পর টমেটো এই অঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

কিন্তু আগে যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধার অভাবে প্রতিবছর একটি বড় অংশের টমেটো নষ্ট হয়ে যেত। আর এই কারণে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতেন। অথচ বাংলাদেশে বহুল উৎপাদিত কিন্তু যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজতকরণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; এমনই ফসল হচ্ছে টমেটো।

এদিকে, দেশের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ গ্রুপ ২০০২ সাল থেকে টমেটো থেকে নানা ধরনের খাদ্যপণ্য প্রস্তুত করে আসছে। প্রাণ সবসময় পণ্যের গুণগত মানের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে। আর পণ্যের গুণগত মান অনেকাংশে নির্ভর করে মানসম্মত কাঁচামালের ওপর। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে ২০১০ সালে প্রাণ টমেটোর চুক্তিভিত্তিক চাষ শুরু করে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা জানান, সেখানে প্রাণ এর প্রায় এক লাখ চুক্তিভিত্তিক কৃষক রয়েছে। যাদের কাছে থেকে টমেটো, আম, বাদাম, দুধ, ডাল, কাসাভাসহ বিভিন্ন কাঁচামাল সংগ্রহ করে প্রাণ। গোদাগাড়ী ছাড়াও রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা এবং দিনাজপুর জেলায় প্রাণ এর চুক্তিভিত্তিক কৃষকেরা টমেটো উৎপাদন করে থাকে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের টমেটো চাষি সানাউল্লাহ (৫২)। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অন্য কৃষকদের মতো তিনিও প্রাণের সাথে চুক্তিভিত্তিক টমেটো চাষ করছেন। তার ক্ষেতের টমেটো সম্পূর্ণ বিষমুক্ত। বিশেষ পদ্ধতিতে মাঁচার ওপরে এই টমেটো চাষ করা হচ্ছে। তিনি এবার দেড় বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করছেন। তিন মাসের মধ্যেই এই ফসল উৎপাদন হবে। এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে তার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সেখান থেকে দেড়শ মন ফলন পাওয়া যাবে। এখানকার ফলন পুরোটাই তিনি প্রাণের বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বিক্রি করে দেবেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের কৃষি বিভাগের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক ব্যবসায়িক গ্রুপও জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

এই ক্ষেত্রে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কৃষকদের আলোর পথ দেখিয়েছে প্রাণ গ্রুপ। প্রাণের সাথে চুক্তি ভিত্তিক টমেটো চাষে স্থানীয় কৃষকরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে- তারা জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টমেটো সরবরাহ করছেন এবং অবশিষ্ট অংশ প্রাণের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে নির্দিষ্ট দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এছাড়া প্রাণ এর সাথে চুক্তিভিত্তিকভাবে বিষমুক্ত টমেটো চাষ করছেন। এর মাধ্যমে স্থানীয় অনেক কৃষক এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়া আগের মতো টমেটো পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার বড় ক্ষতির হাত থেকেও বেঁচেছেন স্থানীয় কৃষক। টমেটোর গুণগত মান ঠিক থাকলেই কৃষকের সেই টমেটোও এখন কিনে নিচ্ছে প্রাণ।

গত কয়েক বছরের তথ্য অনুযায়ী, এজন্য প্রতিবছর প্রাণ এর চুক্তিভিত্তিক কৃষক বেড়েছে গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ হারে। এর পেছনের বড় কারণ হলো উপযুক্ত সময়ে চুক্তিভিত্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে টমেটো সংগ্রহ। এছাড়া অধিক ফলনের জন্য প্রাণ এর পক্ষ থেকে কৃষকদের সহায়তার কথাও উল্লেখ করেন- গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

প্রাণ এর বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ মো. সারোয়ার হোসাইন জানান, এ বছর প্রাণ এর প্রায় ১০ হাজার চুক্তিভিত্তিক কৃষক ৮৬৭ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। চলতি বছর টমেটো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার টন।

এর আগে ২০১৯-২০ সালে প্রাণ এর ৮ হাজার ৪০০ চুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছিলেন এবং টমেটো সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার টন। এছাড়া ২০১৮-১৯ সালে ৭৫০ বিঘা জমি থেকে প্রাণ এর ৭ হাজার ৫০০ হাজার চুক্তিভিত্তিক চাষির কাছ থেকে টমেটো সংগ্রহের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ হাজার টন। ফলে একদিকে প্রতিবছর প্রাণ এর চুক্তিভিত্তিক টমেটো চাষে যেমন কৃষক আগ্রহ দেখাচ্ছে, তেমনি প্রাণ এর চাষিরা প্রতিবছর বিঘা প্রতি আশাজাগানিয়া ফলনও পাচ্ছেন বলেও জানান- এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২১
এসএস/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।