ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সম্ভাবনা: নীতিগত সহায়তা ও বাণিজ্য সহজীকরণের পরামর্শ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সম্ভাবনা: নীতিগত সহায়তা ও বাণিজ্য সহজীকরণের পরামর্শ

ঢাকা: বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি করতে আগ্রহী ভারত। দুই দেশের মধ্যে ১৬ বিলিয়ন ডলারের (সাড়ে ১৩ লাখ কোটি টাকা) বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে।

খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, কৃষি, মৎস ও  হালকা প্রকৌশলীখাতে বিনিয়োগের সম্ভবনা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস, উন্নত কানেক্টিভিটি, পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিতকরণ, নীতিগত সহায়তা ও ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যয় আরো কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে দেশটি।

রোববার (২৯ আগস্ট) ভারতীয় হাইকমিশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয়ে এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারটি
ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়। সেখানে জাতীয় পর্যায়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক রিপোর্টাররা অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারে তিনটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। একটি ঋণ সংক্রান্ত, একটি যোগাযোগ এবং অপরটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ওপর।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ভারতের শীর্ষ বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশে ভারতের ৩৫৫টি কোম্পানির ৩৫৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। কিন্তু এতে ভারত সন্তুষ্ট নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বাড়াতে চায় ভারত। অবকাঠামো ও যোগাযোগে উন্নতি হচ্ছে। কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও আগামীতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়বে। কমপ্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ) নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে। এই চুক্তি হলে তা ব্যবসা-বিনিয়োগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।

তারা বলেন, ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। বাংলাদেশকে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ সুবিধা ভোগ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসছে। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেশি। এছাড়া ট্রানজিটের আওতায় বাংলাদেশের রাস্তার আরও উন্নতি হয়েছে।

ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের বড় অংশীদার ভারত। সাউথ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ বাংলাদেশে। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ আমাদের সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান, সড়ক, রেল ও নদী পথের যোগাযোগ সম্ভব। এটি একটি অনন্য সুবিধা। পৃথিবীর খুব কম রাষ্ট্রের পক্ষেই এটি সম্ভব। এমনকি ভারতের সঙ্গে সীমান্ত থাকা অন্যান্য দেশেরও এটি নেই। এ চার মাধ্যমে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে পারলে দুই দেশই উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ভারতের বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিশেষ করে অটোমোবাইলের যন্ত্রাংশ উৎপাদন, হালকা প্রকৌশল পণ্য উৎপাদন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকে। ভারত বাংলাদেশকে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট করার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ এ প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছে। বর্তমানে দুই দেশ চুক্তি করার জন্য একটি যৌথ স্টাডি করছে। ভারত ইতোমধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও কানাডার সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করেছে। সিইপিএ এক ধরনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি।

সেমিনারে মুল প্রবন্ধে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (বাণিজ্য) প্রমেশ বাসাল বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য কয়েক দশকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি আরও বাড়বে। যোগাযোগ সুবিধা বাড়লে বাণিজ্য যেমন বাড়বে, তেমনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও বাড়বে। এ জন্য ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধাগুলো ধীরে ধীরে দূর হবে। বর্তমানে ভারতে রফতানির বেলায় বাংলাদেশি পণ্যর অতিরিক্ত কোনো চার্জ নেই। এটি ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা পাচ্ছে।  

বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ৮৫ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। এর গন্তব্য হচ্ছে মূলত ইউরোপের দেশগুলো। কিন্তু পণ্য বৈচিত্রকরণ হলে ভারতেও রপ্তানি বাড়বে। বিশেষ করে চামড়া, খাদ্য ও কৃষি পণ্য যেগুলো নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ।

সেমিনারে রেল সংযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন ভারতীয় হাইকমিশনের রেলওয়ে উপদেষ্টা অনিতা বারিক। তিনি অক্সিজেন প্রেরণের উদাহরণ দিয়ে বলেন, দুই দেশ সামগ্রিকভাবে কাজ করলে যে দ্রুততার সঙ্গে রেল পরিবহন সম্ভব তা অক্সিজেনের প্রেরণের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত থেকে অক্সিজেন নিয়ে ১৩টি ট্রেন এসেছে। যার খরচ এক লাখ রুপির মতো, এজন্য অবশ্য অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি।

সেমিনারে ঋণ সংক্রান্ত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ভারতীয় ঋণে ৪১ কোটি মার্কিন ডলারে ১৪টি প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে। আরো ৮টি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে প্রায় দেড়শ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া দরপত্রে প্রক্রিয়াধীন আছে ১৪টি প্রকল্প। যার ব্যয় হবে ২৭৬ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া প্রকল্প পরিকল্পনায় আছে ১১টি। এক্ষেত্রে ব্যয় হবে ২২২ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
জিসিজি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।