ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফেনীতে মাছের উদ্বৃত্ত উৎপাদন, অন্য জেলায়ও যাচ্ছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
ফেনীতে মাছের উদ্বৃত্ত উৎপাদন, অন্য জেলায়ও যাচ্ছে

ফেনী: ফেনীতে মাছ চাষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখানকার উৎপাদিত মাছ যাচ্ছে দেশের অন্য জেলাগুলোতেও।

 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় মোট মাছের চাহিদা ছিল ৩১ হাজার ৭৪৪ মেট্রিক টন। এই অর্থবছরে মোট মাছ উৎপাদন হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৭১ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন। জেলায় মাছ উদ্ধৃত রয়েছে ১ হাজার ৯২৬ দশমিক ২৬ মেট্রিক টন। কিন্তু কার্যালয় চালানোর জন্য যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন সে অনুযায়ী জনবল নেই।  আমরা মাছ চাষে সফল। জেলায় মাছের চাহিদা থেকেও আমাদের উদ্ধৃত রয়েছে। জেলায় আড়তগুলোতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাছ আসে অনেক সময় বাইরের জেলায় ও এখান থেকে মাছ যায়। এছাড়াও বাইরের জেলার মাছ ও ফেনীর আড়তগুলোতে আসে।

আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে চাষিদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। তবে মাছ চাষি ও খামারিদের জন্য যে, প্রণোদনা দেওয়ার কথা সরকার থেকে বরাদ্দ না আসার কারণে দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে চেষ্টা করি যতটুক সম্ভব প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করা যায়। আমরা মৎস্য চাষ উপকরণ এবং প্রকল্প তৈরিতে সহযোগিতা করি, মৎস্যখাতে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করি পাশাপাশি মৎস্যজীবী জেলেদের মধ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় ভিজিএফের খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকি।  সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ইলিশ ধরা নিষেধ যখন থাকে তখন আমাদের নিবন্ধিত যেসব সমুদ্রগামী জেলেরা রয়েছে তাদের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে যাতে তারা ওই সময়টাতে পরিবার নিয়ে চলতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা সফলভাবে মাছ চাষ করলেও আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। যে কাজ আমরা এক কর্মকর্তা দিয়ে করানোর কথা তাকে দিয়ে অনেকগুলো কাজ করাতে হচ্ছে। এতে করে বাইরের অনেক কাজ করা সম্ভব হয় না।   আমার দপ্তরে সহকারী, অ্যাকাউন্ট্যান্ট, পিয়ন, খামার পরিদর্শন কর্মকর্তাসহ অনেক পদে জনবল নেই। এর কারণে একটা কাজ করতে গেলে লোকবল নেই। আমাদের বিভিন্ন কাজে রিপোর্ট দিতে হয় কিন্তু যে লোক ফিল্ডে কাজ করবে তাকে দিয়ে রিপোর্ট করতে হচ্ছে। এর কারণে আমরা অনেক কাজ ঠিকভাবে করতে পারছি না।

ফেনী সদর উপজেলা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, জেলা দপ্তরের মতো উপজেলায় ও জনবল সংকট রয়েছে। ফেনী সদরে কিছু জনবল থাকলেও অন্যান্য উপজেলার একই চিত্র।

মাছে ওষুধ ও জেলি পুশের বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, আমরা জেলে ও খামারিদের সচেতন করছি। বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করছি যাতে করে, মাছে ওষুধ বা জেলি পুশ করে বিক্রি না করে।

জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জল ভাগে মাছ উৎপাদন হয় ৩৩ হাজার ৬৭১ মেট্রিক টন। জেলার মোট ৩০ হাজার হেক্টর জল ভাগে ৩৩ হাজার ৬৭১ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয় বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম।  

তিনি বলেন, এর মধ্যে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি পুকুর ও দীঘি। খাঁচায় মাছ চাষ, চিংড়ি খামার/ঘের, সাগর, নদ-নদী, প্লাবন ভূমি, বিল। এছাড়া মৌসুমি মাছ চাষে ধানক্ষেতে ও বারোপিটে মাছ চাষ হয়।

জেলায় জেলে/মৎস্য চাষির সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার উল্লেখ করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলায় মোট মৎস্য চাষি রয়েছে ২৪ হাজার ৯৬০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার ৬শ জন এবং নারী ১ হাজার ৩৬০ জন। জেলে/মৎস্যজীবী রয়েছে ৬ হাজার ২০৮ জন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৮৭৮ জন নিবন্ধিত। এদের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে রয়েছে ৩৪৫ জন।

তিনি বলেন, জেলায় বিল নার্সারি রয়েছে ৪টি, মাছ বাজার রয়েছে ১৫৭টি, বরফ কল রয়েছে ৬টি এরর মধ্যে ৪টি নিবন্ধিত। সরকারি মৎস্য খামার রয়েছে ২টি হ্যাচারি রয়েছে ২টি। এছাড়াও মৎস্য অভয়শ্রম ৩টি, নিবন্ধিত মৎস্য খাদ্য বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ৫৭টি, মৎস্য খাদ্য উৎপাদন কারখানা ১টি, মৎস্য খাদ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ১টি, বেসরকারি মৎস্য হ্যাচারি রয়েছে ১৪টি।

জেলায় মাছ চাষে একাধিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে জানিয়ে ওই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, এই এলাকায় অধিকাংশ জলাশয়ে নভেম্বর-মার্চ পর্যন্ত পানি থাকে। পাহাড়ি ঢলে পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজীর কিছু এলাকার পুকুর প্রতি বছর প্লাবিত হয়। দেশীয় প্রজাতির পোনা মাছ (শিং, মাগুর, গুলশা, পাবদা ইত্যাদি) প্রাপ্তিতে সমস্যা দেখা দেয়।

মৎস্য বিভাগের অনেক প্রকল্পের এই জেলার উপজেলাগুলোতে কার্যক্রম নেই এবং সরকারি হ্যাচারিগুলোতে অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। এছাড়াও সরকারি দপ্তরগুলোতে জনবলের সমস্যা উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে জেলায় মৎস্য চাষকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান।

জেলা প্রশাসক বলেন, এখন মাছ উৎপাদনে দেশ অনেক ভালো অবস্থানে আছে। বিশ্বে মাছ উৎপাদনে আমরা চতুর্থ স্থানে আছি। এশিয়ার মধ্যে তেলাপলিয়া উৎপাদনে ৩য় স্থানে আছি। আমাদের আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে।  

জেলা প্রশাসক বলেন, একদিন দেশ মৎস্য চাষে বিশ্বের এক নম্বর দেশ হবে তার জন্য মৎস্য অধিদপ্তরসহ খামারি, মাছ চাষি, জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আগে জাটকা ধরা বন্ধ করতে অনেক মোবাইল কোর্ট করতে হতো কিন্তু এখন মৎস্যজীবীরা এটিকে সহজভাবে নিয়েছে। এর কারণে মাছ উৎপাদন ভালো হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।