ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পলিয়েস্টার সুতার অভাবে বেকার ৬০ লাখ তাঁতী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১
পলিয়েস্টার সুতার অভাবে  বেকার ৬০ লাখ তাঁতী

ঢাকা: দেশের তাঁতশিল্প রক্ষায় অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রেয়াতী শুল্কে পলিয়েস্টার সুতা আমদানির পথ খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতী সমিতি।

রোববার (৫ সেপ্টেম্বর)  দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি মো. মনোয়ার হোসেন ।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় তাঁতী সমিতির সহ-সভাপতি মো, শাহজাহান, নির্বাহী সদস্য দেলোয়ার হোসেন, আলী হোসেন, মঞ্জু রানী প্রামানিক, মো, আইয়ুব আলীসহ অন্যান্য নেতারা। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও নরসিংদী জেলার তাঁতী সমিতির নেতারাও অংশ নেন সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা মরে যাচ্ছি। আপনারা আমাদের বাঁচান। আমাদের প্রায় ৫০ ভাগ তাঁতশিল্প এখন বন্ধ। সেখানে কর্মরত ৬০ লাখ শ্রমিক বেকার। শক্তিশালি একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় সারা দেশে  তাঁতশিল্প ধ্বংসের পথে। বন্ধ হয়ে গেছে ৫০ ভাগ তাঁত। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের একটি সিন্ডিকেট কৌশলে সুতা আমদানি বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম এ সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। মাত্র ৭৫ টাকা পাউন্ডের কটন সুতার দাম তিন থেকে চারগুণ বাড়িয়ে দিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে তথাকথিত ওই সিন্ডিকেট। ফলে ২৪ লাখ দেশি তাঁতের মধ্যে ১৫ লাখই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে গেছেন ৬০ লাখ শ্রমিক।

তিনি বলেন, গত দুই বছরে এই খাত থেকে বিটিএমএ’র যোগসাজশে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। সারা দেশে এই তাঁত শিল্প বন্ধ হওয়ার পেছনে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের দুর্নীতি, অবহেলা, অনিয়মকে দায়ী করে তিনি বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম সাহেব বিটিএমএ’র সঙ্গে আঁতাত করে তাঁতী সমাজের সর্বনাশ করেছেন।

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা কৌশলে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছেন। বোর্ডের অধীনে সরকারি কেনাকাটাসহ এ শিল্প থেকে নানাভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে এই সিন্ডিকেটকে। দেশীয় তাঁত বন্ধ রেখে পরোক্ষভাবে কটন মিলগুলোকে ব্যাপক বাণিজ্যের সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একদিকে বেকারত্ব, অন্যদিকে করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাবে অনাহারে, অর্ধাহারে দিন পার করছেন তাঁতী পরিবারের সদস্যরা।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এ শিল্পই আজ ধ্বংসের পথে। তাঁতীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া শুল্কমুক্ত পলিয়েস্টার সুতা আমদানির নির্দেশ কৌশলে লঙ্ঘন করে টানা দুই বছর ধরে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। বোর্ডের বিধান থাকা সত্ত্বেও তাঁতি সমিতি কিংবা তাঁতি সমাজের কোনো প্রতিনিধি কোথাও রাখা হয়নি দুই বছর ধরে।

তাঁতীদের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আবেদন ফরমে দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক তাঁতী সমিতির সভাপতির সুপারিশের একটি নিয়ম থাকলেও তাঁত বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান নিজের একক সিদ্ধান্তে তা অন্যায়ভাবে উঠিয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, তাঁতীদের কোনো প্রতিনিধিত্ব রাখা না হলেও সুতা আমদানি সংক্রান্ত সুপারিশ কমিটিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিটিএমএ’র সভাপতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এরপর কমিটির প্রথম বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত শুল্কমুক্ত সুবিধায় তাঁতীদের জন্য পলিয়েস্টার সুতা আমদানির লক্ষ্যে জারি করা এসআরও বাতিলের প্রস্তাব করেন এই বিটিএমএ চেয়ারম্যান। তার প্রস্তাবেই মূলত: এখনও পর্যন্ত তাঁতীদের রেয়াতি শুল্কে পলিয়েস্টার সুতা আমদানি বন্ধ রেখেছে তাঁত বোর্ড।

এছাড়াও তাঁতীদের প্রশিক্ষণসহ নানা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।