ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইভ্যালির কোটি টাকার পণ্য ‘খোলা বাজারে’ বিক্রি!

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
ইভ্যালির কোটি টাকার পণ্য ‘খোলা বাজারে’ বিক্রি!

সাভার (ঢাকা): বাংলাদেশের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সিইও এবং এমডি গ্রেফতার হওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা।   প্রতিষ্ঠানটির ওয়্যারহাউজ থেকে বিপুল পরিমাণ মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু পণ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

পরে সেগুলো ‘খোলা বাজারে’ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ইভ্যালির কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে।  

জানা গেছে, ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল গ্রেফতার হন ১৬ সেপ্টেম্বর। ওই দিন ইভ্যালির প্যাকেজিং সেকশনের দায়িত্বে থাকা মোজাম্মেল ও তার শ্যালক জাহাঙ্গীরের সহযোগীরা মিলে কার্টনজাত কিছু পণ্য সাভারের হেমায়েতপুরের পূর্বহাটি এলাকায় আনেন।  মোজাম্মেলের শ্বশুরবাড়িতে রাখা সেই কার্টনে  ছিল দামি মোবাইলসহ নানা পণ্য। পণ্যগুলো পরে বাইরে বিক্রি করার অভিযোগ ওঠে।  

ইভ্যালির মালামাল বাইরে বিক্রির বিষয়টি সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন গ্রহক আহাদ আহম্মেদ। তিনি মোজাম্মেলের সেই বাড়িতে কয়েকবার গেছেন। বাড়িতে থাকা পণ্যগুলোর আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা বলে দাবি এই প্রত্যক্ষদর্শীর।  

তিনি জানান, সিইও গ্রেফতারের পর দিন ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে ইভ্যালির ১০-১২ জন গ্রাহক মোজাম্মেলের সেই বাড়ির সন্ধান পান। তারা নিজেদের অর্ডার করা পণ্য বুঝে পাওয়ার জন্য শনিবার সেখানে যান। সেখান থেকে তাদের দাবি করা পণ্য বুঝে দিতে একদিন সময় চান মোজাম্মেল। সেই সময় পার হয়ে যাওয়ার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে মোজাম্মেলের মোবাইল ফোন।  

আরও পড়ুন: ইভ্যালির সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী গ্রেফতার

আহাদ আহম্মেদ আরও জানান, হেমায়েতপুরে মোজাম্মেলের শ্বশুরবাড়িতে আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ কার্টনভর্তি পণ্যের খোঁজ পান তিনি। তারপরই সেখানে যান। ওই বাসায় ঘরভর্তি কার্টন খুলে দুটি কার্টনে আইফোন ও রিয়েলমি ব্র্যান্ডের মোবাইল দেখতে পান। সে সময়ও মোজাম্মেল জানান, বাকি কার্টনভর্তি মোবাইল ও মোবাইল এক্সেসরিজ রয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, তখন আমার সঙ্গে আরও ১০ থেকে ১৫ জন গ্রাহক ছিলেন। তারা পণ্য চাইলে মোজাম্মেল বলেন যে, ‘আগামীকাল পর্যন্ত সময় দেন, আমরা সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনাদের ব্যবস্থা করব। ’ পরদিন বিকেল থেকে মোজাম্মেলের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। পরে রোববার আবার মোজাম্মেলের শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখি, তিনি ও তার শ্বশুর এজাজ বাসায় নেই। সেই সঙ্গে তাদের ঘরভর্তি মোবাইল ফোনের কার্টনও নেই।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাভারে মোবাইল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এক যুবক বলেন, শনিবার ৩০০ পিস ও রোববার ২০০ পিস রিয়েলমি-৮ ৫জি মডেলের ফোন সাভারের বাজারে ছোট হোলসেলারদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে ১৯ হাজার ৭০০ টাকা করে। হেমায়েতপুর মোজাম্মেলের শ্বশুরবাড়ির এলাকা পূর্বহাটি থেকেই এ ফোনগুলো ডেলিভারি করা হয়।  

ওই যুবক বলেন, ফোনগুলো কে ডেলিভারি করেছে, তা তিনি জানেন না। ইভ্যালি ছাড়া এই মডেলের মোবাইল ফোন এত কম দামে অন্য কেউ আর বাজারে ছাড়েনি। সাধারণত এই ফোনটির পাইকারি মূল্য ২০ হাজার টাকার ওপরে। আমি তো শুধু ৫০০ পিসের সন্ধান পেয়েছি। প্রায় ২০ হাজার টাকা করে যদি ৫০০ মোবাইল বিক্রি করে দেওয়া হয়, তাহলে ইতোমধ্যে কোটি টাকার মোবাইল বিক্রি হয়েছে।  

আরও পড়ুন: ইভ্যালি নিয়ে যে ‘নীল নকশা’ ছিল রাসেলের

মোজাম্মেলের পরিবারের এক সদস্য বলেন, যেদিন রাসেল গ্রেফতার হন ওই দিন (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত ২টার দিকে একটি মাইক্রোবাস ও একটি লেগুনা গাড়িতে করে পণ্যগুলো তাদের বাড়িতে আনা হয়। মানুষ ঝামেলা করতে পারে তাই মালগুলো রাতে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে শনিবার বিকেল ৩টার দিকে পণ্যগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।  

অভিযোগের বিষয়ে মোজাম্মেল ও জাহাঙ্গীরের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।  

এ বিষয়ে জানতে ইভ্যালির প্রশাসন বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।