ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ চান ঢাকা ব্যাংক চেয়ারম্যান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ চান ঢাকা ব্যাংক চেয়ারম্যান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ঢাকা ব্যাংকের শাখার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ব্যাংকিং খাতের ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা গেলে স্বল্পসুদে নতুন গ্রাহকদের ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন বেসরকারি খাতের ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার। তাই ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইউনিয়ন টাওয়ারে ঢাকা ব্যাংকের ১০৮তম শাখার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন আব্দুল হাই সরকার।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক, ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস-চেয়ারম্যান এটিএম হায়াতুজ্জামান, পরিচালক আলতাফ হোসেন সরকার ও বসুন্ধরা শাখার ম্যানেজার শামস রোমানা রিমি।



আব্দুল হাই সরকার বলেন, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারের আরও কিছু শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। পদক্ষেপ নেওয়া গেলে অনেক টাকা ব্যাংকিং খাতে ফিরে আসবে। নতুন গ্রাহকদের স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়া যাবে। খেলাপি ঋণ আমাদের অনেক কষ্ট দিচ্ছে। যার ফলে আমাদের সুদহার অনেক বেশি। খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকার শক্তিশালী আইন-কানুন করলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে। আইনের মাধ্যমেই ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা সম্ভব।

ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরও বলেন, গ্রাহকই আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহকরা আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করে, তাদের সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে চলেছি। গ্রাহক যাতে খুশি থাকে সেটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। যারা আমাদের পুষ্ঠপোষক, গ্রাহক আমরা তাদেরই গুরুত্ব দেই। আমাদের মূল পরিকল্পনায় রয়েছে গ্রাহককে ভালো সেবা দেওয়া।

আব্দুল হাই সরকার বলেন, আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে ঢাকা ব্যাংককে পুরো ডিজিটালাইজেশন করা। গ্রামের সাধারণ মানুষের সেবা করা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষকে শাখা-উপশাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার কাজ ইতোমধ্যে আমরা শুরু করেছি। ধীরে ধীরে আমরা দেশের বাইরেও কার্যক্রম শুরু করবো। লোকাল ব্যাংক থেকে গ্লোব্লাল উইং বাড়ানোর ইচ্ছা রয়েছে। সেই পরিকল্পনা মাথায় রেখেই কাজ করছি। আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। এরমধ্যে আইএফসির একটি অ্যাওয়ার্ড রয়েছে। গ্রাহককে খুশি করা এবং জাতি গঠনে কতটুকু অবদান রাখতে পারবো সেটা নিয়েই কাজ করছি।


বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ঢাকা ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর

বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ঢাকা ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখার জন্য শুভকামনা। আশা করি, বসুন্ধরা গ্রুপ ও ঢাকা ব্যাংকের একে অপরের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আমি ঢাকা ব্যাংকের পর্ষদকে ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে এমডি এমরানুল হককে। তার কর্মদক্ষতার মাধ্যমে ঢাকা ব্যাংক আইএফসি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, ঢাকা ব্যাংক ২৬ বছর ধরে দেশের মানুষের সেবা করছে। আমাদের একটাই লক্ষ ও উদ্দেশ্য আমরা ধীরে ধীরে প্রসার করবো, যাতে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারি। এজন্য আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ব্যাসেল কমপ্লায়েন্স মেনে চলছি। আমরা আগামীতে দেশের বাইরে প্রথমে এশিয়া, ইউরোপ তারপরে আমেরিকাতে ঢাকা ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করতে চাই। কারণ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে হলে তখন দেশের বাইরে আমাদের কার্যক্রম থাকতেই হবে।

তিনি আরও বলেন, হেলদি ব্যাংকিংয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ আদায় সংক্রান্ত সম্প্রতি জারি করা সার্কুলারটি গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলোচনা সাপেক্ষে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ব্যাংকিং খাত যাতে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে থাকে সে বিষয়টি বিবেচনা করেই বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত এনবে বলে আমি মনে করি।

এমরানুল হক বলেন, নতুন বছরে বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে আমাদের দেশেও তার প্রভাব পড়বে। কারণ বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির যোগসূত্র রয়েছে। সেটা আমাদের জন্য হবে নতুন চ্যালেঞ্জ। যদিও কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভালো ছিল। আশা করি ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে। ২০২১ সালে আমরা যতটুকু ধারণা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো ছিলাম। বিশেষ করে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো নিয়ে এসেছে। ব্যাংকিং খাত সেগুলোকে সুন্দরভাবে বিতরণ করার চেষ্টা করেছে। যতটুকু খারাপ হওয়ার ধারণা ছিল সেই তুলনায় অনেক ভালো ছিলাম। গত দুই বছর উন্নয়ন কার্যক্রম একটু কম হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে পর্যাপ্ত তারল্য ছিল। নতুন বছরে উন্নয়ন কার্যক্রম বেড়ে গেলে তারল্যের ওপরে একটা চাপ আসতে পারে। সেজন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এটা সম্ভব হবে সুষ্ঠুভাবে ঋণ বিতরণ, আদায় ব্যালেন্স শিট পরিষ্কার রাখতে পারলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।