ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রণোদনার ঋণ পায়নি ৭৪% প্রতিষ্ঠান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২
প্রণোদনার ঋণ পায়নি ৭৪% প্রতিষ্ঠান

ঢাকা: মহামারি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্বারে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজেরে ঋণ পায়নি ৭৪ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যে ২৩ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রণোদনা পেয়েছে তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ জানিয়েছে প্রণোদনার ঋণ যথেষ্ট নয়।

আর ৬৫ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে আরও সহযোগিতা চেয়েছে।

সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আস্থা ও প্রত্যাশার ওপরে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) উদ্যোগে পরিচালিত সপ্তম পর্যায়ের জরিপের ফলাফলে এ চিত্র উঠে এসেছে।

জরিপের ফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

দেশের আটটি বিভাগের ৩৮টি জেলার ৫০২টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩ থেকে ২৪ জানুয়ারি উৎপাদন খাতের তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ প্রস্তুতকারক, হালকা প্রকৌশল ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং সেবাখাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশন, আর্থিক খাত ও রিয়েল এস্টেট খাত জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ৭৪ শতাংশ কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ পায়নি এবং মাত্র ২৩ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ পেয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রণোদনা পেয়েছে, তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ জানিয়েছে যে তাদের জন্য ওই প্যাকেজ যথেষ্ট নয়। ৬৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে, সরকারের পক্ষ থেকে আরও সাহায্য দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ  দরকার এমন সাহায্যের মধ্যে আছে—স্বল্প সুদে কার্যকরি পুঁজির ঋণ, রপ্তানিকারকদের জন্য শিপমেন্ট-পূর্ববর্তী পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা এবং অসহায় শ্রমিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।

জরিপে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও ওমিক্রন সংক্রমণের ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডে নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও, সার্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় এবং তিন-মাস অন্তর পরিক্রমাতেও ব্যবসায় উন্নতি হয়েছে। তবে, কোভিডের নতুন ধাক্কার কারণে সামনের তিন মাসের জন্য ব্যবসাগুলোর প্রত্যাশা তুলনামূলক কম। অন্যদিকে সার্বিকভাবে ব্যবসার পরিবেশে উন্নতি হয়েছে।

জরিপে দেখা যায়, পিবিএসআই (বার্ষিক) সূচকের মান ৫৬ দশমিক ৭৯ থেকে ৬০ এ উন্নীত হয়েছে। একইভাবে পিবিএসআই (ত্রৈমাসিক)-এও উন্নতি দেখা গেছে। আগের বছরের তুলনায়, অন্যান্য খাতগুলোর চেয়ে তৈরি পোশাক খাত, টেক্সটাইল, রেস্টুরেন্ট, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ওষুধ শিল্পের ব্যবসায় পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে।

তবে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চের জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যাশা আগের চেয়ে কমেছে। সানেমের ব্যবসায় আস্থার সাতটি পর্যায়ের জরিপে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যাশা ও বাস্তব অবস্থার মধ্যে তুলনামূলক চিত্রও তুলে ধরা হয় ওয়েবিনারে।

সপ্তম পর্যায়ের জরিপে ১৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে তাদের মতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার জোরদার হয়েছে। যদিও ষষ্ঠ পর্যায়ে এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ২১ শতাংশ। অপরদিকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার মোটামুটি বলে মনে করে ৪৪ শতাংশ, যেটি আগের পর্যায়ে ছিল ৫২ শতাংশ। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং করোনার নতুন ধাক্কা সত্ত্বেও, গড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার ৬০ দশমিক ৬শতাংশ পুনরুদ্ধার হয়েছে, যা পূর্ববর্তী রেকর্ড ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশকে (২০২১ সালের মার্চের ফলাফল) ছাড়িয়ে গেছে।

২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে সার্বিকভাবে ইবিআই সূচকে কিছুটা পতন হলেও, জরিপে দেখা যায় এই সূচকে বর্তমানে উন্নতি হয়েছে এবং গত সাত পর্যায়ের জরিপে এই সূচকে সর্বোচ্চ মান দেখা গিয়েছে। অর্থাৎ, ব্যবসার পরিবেশে গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উন্নতি হয়েছে। তবে, ইবিআই সূচকের কিছু কিছু উপাদান যেমন কর, দুর্নীতি, দক্ষ শ্রমশক্তি, যানবাহনের মান, বাণিজ্য কাঠামো এবং কোভিড ব্যবস্থাপনায় কিছু অবনতি দেখা গিয়েছে। এছাড়া, চামড়া, পাইকারি এবং আবাসন খাতে ইবিআইয়ে কিছু অবনতি হয়েছে।

জরিপকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭১ শতাংশ জানিয়েছে, ওমিক্রন সংক্রমণের প্রভাবে তাদের রপ্তানি বা বিক্রি কমেছে। অন্যদিকে ৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে এজন্য তাদের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে এবং এজন্য খরচও বেড়েছে। ৮২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ওমিক্রনের জন্য সার্বিকভাবে পুঁজি ও শ্রমের খরচ বেড়েছে।

ওমিক্রণের কারণে রপ্তানি কমার ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানিয়েছে ৮৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে ওমিক্রনের জন্য অতিরিক্ত স্বাস্থ্য-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং সে সংক্রান্ত খরচ বাড়ার ঝুঁকি বেড়েছে। ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে পুঁজি ও শ্রমের খরচ বাড়ার ঝুঁকি বেড়েছে।

জরিপে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবটিও উঠে এসেছে। ৯৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে যানবাহনের খরচ বেড়েছে এবং ৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে তাদের উৎপাদন শক্তির খরচ বেড়েছে।

আগের পর্যায়ের জরিপের মতোই, এ পর্যায়ের জরিপেও দেখা গেছে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, বন্ধক, দীর্ঘসূত্রিতা, ব্যাংক-মক্কেল সম্পর্ক ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হয়।

অধ্যাপক সেলিম রায়হান প্রণোদনা প্যাকেজের দ্রুত বিতরণ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজীকরণের ওপর জোর দেন। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিকে উদ্বেগজনক বলে, অধ্যাপক রায়হান এ ক্ষেত্রে জ্বালানি তেল আমদানির ওপর কর কমানোর প্রস্তাব দেন।

তিনি বলেন, জ্বালানির মূল্যের জন্য নীতিনির্ধারকদের একটি কৌশলগত, গতিশীল এবং ভবিষ্যৎ-মুখী নীতি নেওয়া দরকার। রেমিট্যান্সের নিম্নমুখী ধারা লক্ষ্য করে ওয়েবিনারে বলা হয়, রেমিট্যান্সের ধারার একটি মূল্যায়ন করা দরকার এবং রেমিট্যান্সের জন্য নির্ধারিত সরকারি প্রণোদনা ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ বাড়ানো দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২১
এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।