ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিনিয়োগের সুযোগ না থাকায় 'আমানত' বাড়ছে ব্যাংকে

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
বিনিয়োগের সুযোগ না থাকায় 'আমানত' বাড়ছে ব্যাংকে

ঢাকা: দেশে বিনিয়োগের ভালো সুযোগ না থাকায় ব্যাংকগুলোতে ভিড় করছেন সঞ্চয়কারীরা। ফলে ২০২১ সালে ব্যাংকগুলো ১৫ দশমিক ১২৪ ট্রিলিয়ন টাকার বেশি আমানত পেয়েছে।

যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।  

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সুদের হার কম হলেও মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখছে। এতে বোঝা যাচ্ছে  যে মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে সঞ্চয়ের কোনো বিকল্প সুযোগ নেই। তারা আরও বলেন, স্থিতিশীল পুঁজিবাজার আমানতকারীদের বিনিয়োগের একটি বিকল্প জায়গা হতে পারে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ সময়ে নতুন হিসাব খোলার সংখ্যাও (চলতি, সঞ্চয়ী ও মেয়াদি)  বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ।   ২০২১ সাল শেষে অ্যাকাউন্ট দাঁড়িয়েছে ১৫১ দশমিক ২৫ মিলিয়নে।

তবে ২০২১ সালে স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৭৩ হাজার ৬৮৫টি অ্যাকাউন্ট কমেছে।

কিন্তু মেয়াদি ক্যাটাগরিতে আমানতের পরিমাণ প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৪৮  দশমিক ০৭ বিলিয়ন টাকা। ব্যাংকিংখাতের সবচেয়ে বড় উপাদান স্থায়ী আমানত (এফিডআর), যা মোট আমানতের প্রায় ৪৪ শতাংশ দখল করে আছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংকিংখাতে অ্যাকাউন্টের বিপরীতে সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৮৯ দশমিক ৯২ বিলিয়ন টাকা। গত ডিসেম্বরের শেষে মোট সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে ১০১ দশমিক ৯৫ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।   যা ২০২০ সালের তুলনায় বেশি। এ সময় চলতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৫ লাখ ২ হাজার ১৫৮ টি বেড়ে ৬ দশমিক ৮৮ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে।

চলতি হিসাবের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৭২ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন টাকা, যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা তথ্য-উপাত্তে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক কর্মক্ষমতা দেখানো হয়েছে।

ব্যাংকাররা বলেছেন সামগ্রিক বৃদ্ধি ছিল অনেক ক্ষেত্রে যেমন উচ্চ রেমিট্যান্স, আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মাধ্যমে প্রণোদনা তহবিলের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ।

বেসরকারিখাতের অন্যতম বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্র্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, অনেক লোক আছে যারা আনুষ্ঠানিক লেনদেনের দিকে ঝুঁকছে এবং এটি একটি মূল কারণ। এ ধরনের ব্যাংকগুলো দেশের ব্যাংকিং খাতের অধিকাংশ আমানত আকর্ষণ করে।


 তিনি আরও বলেন, ‘পঞ্জিকা বছরের দ্বিতীয়ার্ধের পরে ক্ষুদ্র ও মাঝারিখাতের উদ্যোগগুলোর (এসএমই) প্রবৃদ্ধি ছিল দুই অংকের ঘরে। গত বছর আমাদের দুটি লকডাউন ছিল, তাই বছরের প্রথমার্ধে খারাপ লেনদেন দেখা গেছে, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের পরে এটি দুর্দান্ত ছিল...। ’

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংকগুলোর আমানত আকর্ষনীয় পরিমাণ ছিল।   কিন্তু বর্তমান অবস্থা একটু খারাপ। কারেন্ট-অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন খুব ঘাটতি দেখা দিয়েছে তাই এটি ব্যাংকিং খাতে প্রভাব ফেলেছে।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হুসেন বলেন ব্যাংকিংখাতের ওপর মানুষের এখনও অনেক আস্থা আছে। কিন্তু সুশাসন উন্নত করার দরকার আছে, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে।

তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণ এবং অন্যান্য সমস্যাগুলো সমাধান করা উচিত। অন্যথায় ব্যাংকিং খাত ভবিষ্যতে এই ধরনের আমানত আকর্ষণ করবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, ১২ মার্চ,২০২২
এসই/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।