ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এ ঈদে ৭০ কোটি টাকার জুতা বিক্রি হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় 

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
এ ঈদে ৭০ কোটি টাকার জুতা বিক্রি হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা (ফুটওয়্যার, জুতা-স্যান্ডেল) কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।  
বর্তমানে জেলায় দেড় শতাধিক জুতার কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ২০টিতে অটো মেশিন রয়েছে।

বাকিগুলোতে জুতা তৈরি হয় হাতে (ম্যানুয়াল কারখানা)। এসব কারখানায় চার হাজারেরও বেশি শ্রমিক রাত-দিন কাজ করছেন। তবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ভরা মৌসুমেও তাদের স্বাভাবিক উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।  

জুতা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা জানান, প্রতি বছর শবে বরাতের পর থেকে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত জুতার কারখানাগুলো কর্মচঞ্চল থাকে। শ্রমিকরা সারা বছর এ সময়টির অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু চলতি বছর ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বাড়ায় সংকটে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প।  

১৯৬৩ সাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাদুকা শিল্পের সূচনা। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বেড়েছে এর পরিধি। জেলার বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত জুতা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, হবিগঞ্জসহ সারা দেশেই সরবরাহ করা হয়।

পাদুকা কারখানার মালিক বোখার মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, গেল দুই বছর করোনার কারণে ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হয়নি। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এবং লকডাউন না থাকায় আমরা আশা করেছিলাম গত দুই বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারব। কিন্তু পাদুকা তৈরির প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। তারপরও আমরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আগের দামেই জুতা বিক্রি করছি। ফলে আমাদের লাভ তেমন হচ্ছে না।  

অ্যাকটিভ ফুট কারখানার মালিক রাকিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমার এ অটোমেশিন কারখানায় দুই শতাধিক শ্রমিক রয়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং  থাকায় শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হয়। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে।

আরেক কারখানার মালিক বিল্লাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কারখানায় বিশ্বমানের জুতা তৈরি হয়। ঈদে নারী, পুরুষ ও শিশুদের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা তৈরি হচ্ছে। জুতা তৈরির উপকরণ সোল, ফোম, আঁঠার দাম বেড়েছে। কিন্তু বাজার ধরে রাখতে আমরা আগের দামেই বিক্রি করছি।

ভরসা ফুড কারখানার মালিক জামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে অটো কারখানার সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। অটো কারখানা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। আগে নারী শ্রমিকরা এ পেশায় আসতেন না।

কয়েকজন শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, এখন কাজ বাড়লেও কমে গেছে শ্রমিকের পারিশ্রমিক। সর্বনিম্ন আট হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারের প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেশি, তাই আমরা যে টাকা বেতন পাই, তা দিয়ে পরিবার নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সারা বছর আমরা এ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকি। মালিকের আয় রোজগার বাড়লে আমরা কিছুটা লাভবান হব।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাদুকা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ মৌসুমকে সামনে রেখে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। বাড়তি দামে পাদুকার বিভিন্ন উপকরণ কিনলেও আমরা দাম বাড়াতে পারছি না। অপরদিকে বিদুৎ সমস্যার কারণে আমাদের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।  

উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রতিদিন অটো ও ম্যানুয়াল কারখানা মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের লক্ষাধিক জোড়া জুতা উৎপাদিত হচ্ছে।  
এবার ঈদ মৌসুমে শত কোটির টাকার জুতা তৈরি করা হবে। আশা করছি, প্রায় ৭০/৮০ কোটি টাকার জুতা বিক্রি হবে এবারের ঈদে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।