ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নষ্ট ডেমু ট্রেন সচল করলেন দেশি প্রকৌশলীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২
নষ্ট ডেমু ট্রেন সচল করলেন দেশি প্রকৌশলীরা

দিনাজপুর: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকা দুইটি ডেমু ট্রেন সচল করেছেন বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা। চীনা প্রযুক্তি সরিয়ে দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা ট্রেন দুইটি সচল করতে সক্ষম হয়েছেন।

 

উপজেলায় ডিজেল লোকো কারখানায় প্রায় দেড় বছর চেষ্টার পর সচল হওয়া দুইটির মধ্যে একটি ডেমু ট্রেন রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল শুরু করে। এ সময় ডেমু ট্রেনটির গতি ছিল ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার।  

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে ডেমু ট্রেনটিকে যেকোনো দিন আনুষ্ঠানিকভাবে রেল বহরে হস্তান্তর করা হবে।  

রেলওয়ের তথ্যমতে, ৬৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে ২০টি ডেমু ট্রেন বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ২০ বছরের আগে ট্রেনগুলো নষ্ট হবে না বলে চীনের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দাবি করলেও চালুর মাত্র ৪-৫ বছরের মধ্যে একে একে বিকল হতে থাকে সেগুলো। আমদানির ৯ বছরের মধ্যে একে একে ২০টি ট্রেন বিকল হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, পার্বতীপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে পড়ে থাকে। ট্রেনগুলোর প্রথম দিকে মডিউল নষ্ট হতে শুরু করে। প্রতিটি ট্রেনে সর্বমোট ৪০টি মডিউল রয়েছে। আর এই নষ্ট হওয়া মডিউলগুলোর প্রতিটির দাম প্রায় ৭ লাখ টাকা। আর মডিউলগুলো ট্রেনে সংযোজন করতে হলে সফটওয়্যারের মাধ্যমে করতে হয়। এই সফটওয়্যার কেবল চীনা প্রকৌশলীরাই দিতে পারেন। প্রতিটি মডিউল ঠিক করতে চীনা প্রকৌশলীদের দেশে আনতে বিপুল পরিমাণ টাকার খরচ হতো।

সূত্রটি থেকে আরও জানা গেছে, অচল ২০টি ডেমু ট্রেন চীনা প্রকৌশলীদের মাধ্যমে সচল করতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা দরকার হলেও মাত্র ১০০ কোটি টাকায় বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভর হবে। একই সঙ্গে ট্রেনের মেরামতের জন্য আর চীনের ওপর ভরসা করে থাকতে হবে না।  

নষ্ট হওয়া ২০ সেট ডেমু ট্রেন ঠিক করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর-উর-আলম দেশীয় প্রকৌশলীদের দারস্থ হন। এসব ডেমু ট্রেন সচল করতে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষার্থী ও আনবিক শক্তি কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান। তিনি দীর্ঘ দেড় বছর গবেষণা করে সফল হন। দেড় বছরের চেষ্টায় মাত্র ৭২ দিন কাজ করে চীনা প্রযুক্তিকে সরিয়ে ফেলে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি একটি ডেমু ট্রেনকে সচল করেন। ইতোমধ্যেই ট্রেনটি লোডসহ ৩ বারের সফল ট্রায়াল হয়েছে। তার এই মেরামত কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন প্রকৌশলী আজিম বিশ্বাসসহ পার্বতীপুর ডিজেল লোকো ওয়ার্কশপের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।  

এ বিষয়ে প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছরের এপ্রিল থেকে ডেমু ট্রেন মেরামত কাজ শুরু হয়। কিন্তু ওই সময় করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যন্ত্রাংশ ঠিক মতো পাওয়া যায়নি। আমরা প্রায় দেড় বছর ধরে এই ডেমু ট্রেনের পেছনে কাজ করে অবশেষে সচল করতে সক্ষম হয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা পরীক্ষামূলক চালিয়েছিও। পরীক্ষামূলে লোড, গতি সব কিছুই ঠিক মতো রয়েছে। চীনা প্রকৌশলীদের মাধ্যমে ট্রেনগুলো ঠিক করতে ৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হলেও দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। আর এই টাকা বরাদ্দ পেলে আগামী ৩ মাসের মধ্যে মোট ২০ সেট ডেমু ট্রেন সচল করে রেল লাইনের চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব।

পার্বতীপুর লোকো ইয়ার্ডের ইনচার্জ কাফী-উল-ইসলাম বলেন, পার্বতীপুরের লোকোসেডে অকেজো অবস্থায় থাকা ২টি ডেমু ট্রেন গত বছরের ২৪ মার্চ মেরামতের জন্য ডিজেল লোকো ওয়ার্কশপে হস্তান্তর করা হয়। প্রকৌশলীরা গত বছরের ০২ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যেই এই ডেমু ট্রেনটি মেরামত চলাকালেই ২৯ বার ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রী লোড ছাড়া ২৭ বার ও যাত্রী লোড নিয়ে ২ বার পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট রেলপথে চালানো হয়েছে। সফলভাবেই এসব ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।