ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে সোনামসজিদ বন্দরেও

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২২
ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে সোনামসজিদ বন্দরেও

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদে। ডলার সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এলসি(লেটার অব ক্রেডিট) সংকটের কারণে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে।

শীত মৌসুম শুরু হলেও বন্দরে ঢুকছে না কোনো ফলের ট্রাক। পাশাপাশি অন্য পণ্য আমদানি হলেও পরিমাণে অনেক কম। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে বন্দরের কয়েকশ শ্রমিক।

রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বন্দরে যে সংখ্যক শ্রমিক রয়েছে সে অনুযায়ী আসছে না ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক। এতে শ্রমিকরা অনেকেই শুয়ে-বসে অলস সময় পার করছেন, আবার কেউবা বসে আছেন কাজের আশায়। অনেককে কর্মহীন হয়ে সারাদিন বসে থেকে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক ট্রাক বন্দরে কম প্রবেশ করায় হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

পাশাপাশি করোনার পরও যাত্রী পারাপার ভারতের অনীহার কারণে বন্ধ থাকায় এবং এলসি সংকটে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় বন্দর এলাকার হোটেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসাও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

আব্দুর রশিদ নামে এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, মাস দুয়েক আগে আমি দিনে ১৫-২০টি ট্রাকে পণ্য লোড করেছি। কিন্তু গত ১৫ দিন থেকে দিনে ৪-৫ ট্রাকের বেশি পণ্য লোড দিতে পারি না। আসলে বন্দরে তো ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে না। আর করলেও তা পরিমাণে অনেক কম। তাই এভাবে কাজ করে আমাদের সারাদিনের খরচ উঠছে না।

নাজমুল নামে স্থলবন্দরের এক শ্রমিক বলেন, এর আগে প্রতিদিন গাড়ি লোড-আনলোড করে দিনে প্রায় ৮০০-১০০০ টাকা আয় করেছি। কিন্তু গত মাস থেকেই বন্দরে ভারতীয় ট্রাকের সংখ্যা কমে গেছে। এতে আমাদের আয়-রোজগারও কমে দাঁড়িয়েছে ২০০-৫০০ টাকায়। কিন্তু বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এতে ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা।

একই অবস্থা বন্দরের অভ্যন্তরে কর্মরত দেড় হাজার শ্রমিকের।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক মানিকুজ্জামানসহ কয়েকজন বলেন, আমাদের চাহিদামত লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) পাচ্ছি না এতে ব্যাহত হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য আমদানি। বেশ কিছুদিন ধরে আমরা ফল আমদানি করতে পারি না এই বন্দর দিয়ে। এতে আমাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত ১৫ দিনে ভুট্টা ছাড়া অন্য কোনো পণ্যই আমদানি করতে পারিনি।

অপর আমদানিকারক দিলীপ কুমার জানান, তিনি দুই মাস থেকে ডলার সংকটের কারণে এলসি করতে পারছেন না। কয়েক দফা উত্তরা ব্যাংকে গিয়েও এর সমাধান না হওয়ায় নতুন এলসি তিনি খুলতে পারেননি।

দেশ এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার ওমর ফারুক সুমন জানান, তিনি প্রধানত ফলের সময় ফল এবং পাথর আমদানি করে থাকেন। ভারতে তার ৮টি কমলা, আঙুরসহ বিভিন্ন ফলের বাগান কেনা রয়েছে। কিন্তু গত দুই মাসে ডলার সংকটের কারণে কোনো এলসি করতে পারেননি তিনি। গত মাস থেকে এ পর্যন্ত তার ৮টি এলসি ঢাকা, উত্তরা ও ইসলামী ব্যাংক ফিরিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে তিনি কোটি টাকার ওপরে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন।

এ ব্যাপারে সোনামসজিদ আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান রাজু বলেন, কিছুদিন থেকে আমাদের এলসিগুলো একটু দেরিতে হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শিগরিই এই সমস্যার সমাধান হবে। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু তিনি বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের পোর্ট ম্যানেজার মইনুল ইসলাম বলেন, গত মাস থেকেই আমাদের এখানে পণ্য আমদানি কমে গেছে। আগে প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ ট্রাক এখানে প্রবেশ করত। আর বর্তমানে ২৫০-২৮০টি ট্রাক প্রবেশ করছে। এতে করে বন্দরের আয় কমে গেছে। ব্যবসা কমে যাওয়ায় বন্দর পরিচালনা খরচ মিটিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতেও বেগ পেতে হচ্ছে।

অপরদিকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা উদ্ধব চন্দ্র পাল বলেন, কি জন্য পণ্য আমদানি কমেছে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বলা যাবে না। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে পণ্য আমদানি কমেছে। গত বছর তাজা ফল আমদানি হয়েছিল ৩১৩ ট্রাক। চলতি বছরে হয়েছে ৭১ ট্রাক। পাথর আমদানি হয়েছিল ২৫৫৯৫ ট্রাক। এবার হয়েছে ২১২৭ ট্রাক। এ্যসোটেড হয়েছিল ২৯ ট্রাক। এবার হয়েছে ৮৩ ট্রাক। অন্যান্য পণ্য গত বছর হয়েছিল ২৯৭০ ট্রাক। এবার হয়েছে ২৬৯৮ ট্রাক।  

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।