ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সম্পাদকীয়

বিশেষ সম্পাদকীয়

ফুটবলের এই উজ্জীবন আশাব্যঞ্জক

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৫
ফুটবলের এই উজ্জীবন আশাব্যঞ্জক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফুটবল এক সময় ছিল এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ফুটবলে লাথি দেয়নি এমন একজন বাঙালিও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ঢাকার মাঠে আবাহনী-মোহামেডানের খেলা থাকলে ঢাকা স্টেডিয়ামের গ্যালারি থাকতো কানায় কানায় পূর্ণ। ফুটবলজ্বরে সারাদেশ ভাগ হয়ে যেতো এই দুই শিবিরে। এই অবস্থাটা এক সময় মিইয়ে আসে। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, ক্লাবগুলোর নানা অব্যবস্থাপনা, সঠিক সময়ে লীগ চালু না হওয়া এবং খেলার মাঠ কমে যাওয়াসহ নানা কারণে ফুটবলের জনপ্রিয়তায় ভাটার টান শুরু হয়। ফুটবলের জনপ্রিয়তা চলে যায় ক্রিকেটের দখলে।

এ অবস্থায় ফুটবলকে আবারও জনপ্রিয় করার কঠিন কাজে হাত দেন সোনালী অতীতের তারকা ফুটবলার কাজী সালাহ উদ্দিন। শুরু হয় ফুটবলকে ঢেলে সাজানোর কাজ। বিদেশি ক্লাবগুলোকে নিয়ে টুর্নামেন্টের আয়োজন, বয়সভিত্তিক ফুটবল চালু করা, পৃষ্ঠপোষক ও স্পন্সর খোঁজার ধারাবাহিক ও সমন্বিত কার্যক্রম চলতে থাকে। ধীরে ধীরে এই উদ্যোগের সুফল ফলতে শুরু করে। আড়মোড়া ভেঙে আবার জেগে উঠতে শুরু করে মৃতপ্রায় ফুটবল। এরই উজ্জ্বল প্রমাণ শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে। ফুটবল থেকে সাময়িকভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলেও ফুটবলের জন্য এদেশের মানুষের ভালোবাসা ও আবেগ আসলে ফুরায়নি। তার প্রমাণ কানায় কানায় ভরে ওঠা স্টেডিয়াম। ভালো ও গোছানো টুর্নামেন্ট আয়োজন ফুটবলের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ও জনপ্রিয়তাকে ফিরিয়ে আনার শুভ লক্ষণটিকেই স্পষ্ট করেছে।

ফাইনালের রাতে ‘গ্যালারির হাজারো মুঠোফোনের আলোয় উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর লাগছিল গোটা স্টেডিয়ামটা। চট্টগ্রামের ফুটবলে এমন রাত আগে কখনো আসেনি। পিছিয়ে পড়েও ইস্টবেঙ্গলকে ৩-১ গোলে হারানোর মধ্যে যে বীরত্ব দেখিয়েছে স্বাগতিক দল, সেটিই আসলে কৃতিত্বটাকে বড় করে তুলছে আরও। রাতটা এর চেয়ে আর বর্ণিল হতে পারত না! শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা থেকে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য শুনে উজ্জীবিত হলো সবাই। ’

জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার আশীষ ভদ্রও মনে করেন, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট  দেশের ফুটবল জাগরণের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেছে। ‘যে সময়টা ফুটবলের সোনালি অধ্যায় ছিল, সে সময় দেখেছি ফুটবলপ্রেমী মানুষের ঢল। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর এমন জোয়ার দেখছি শেখ কামাল ক্লাব কাপে। ’

তবে আশীষ মনে করেন, এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা প্রয়োজন। তবেই স্বার্থক হবে এ টুর্নামেন্টের সাফল্য।
 
সোনালি অতীতের এই তারকা ফুটবলার ভুল বলেননি। উপমহাদেশের সবচেয়ে শক্তিধর ক্লাবগুলোর অন্যতম কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে ফাইনালে উড়িয়ে দিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনী দেশের ফুটবলকে এনে দিল এক নতুন সঞ্জীবনী। একই সঙ্গে ইতিহাসে তারা নিজেদের নামটি লেখাল সোনালি হরফে। আর দেশের ফুটবলের জন্যও এটি এক বড় অর্জন। একই সঙ্গে এই টুর্নামেন্ট দেশীয় ফুটবলের জন্য এক নতুন যাত্রাবিন্দু রচনা করলো। এর মাধ্যমে দেশের খেলোয়াড়রা লাভবান হবেন। এক কথায় ঝিমিয়ে থাকা ফুটবলকে আবারও সাধারণ মানুষের নাগালে নিয়ে এসেছে এই টুর্নামেন্ট। টুর্নামেন্টে দেশীয় যে ক্লাবগুলো খেলছে, তাদের বদৌলতে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা তাদের প্রতিভা ও দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ পেয়েছেন।  

ফুটবলের এই উজ্জীবনকে আমরা স্বাগত জানাই। টুর্নামেন্টের আয়োজক, খেলোয়ার, অংশগ্রহণকারী দলগুলোসহ এদেশের ফুটবলপ্রেমী মানুষ---সবার প্রতি আমাদের শুভেচ্ছা ও অভিবাদন। আমরা চাই ফুটবলের এই নবজন্ম যেন আরও নতুন নতুন সফলতার জন্ম দেয়। সেজন্য সবার নিরলস চেষ্টা জাগরুক রাখতে হবে। ফুটবলের মানোন্নয়নের জন্য আরও অনেক পথ পেরোনো বাকি। কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। ক্রিকেটের মতো ফুটবলও একদিন বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্বদরবারে উজ্জ্বল করবে----আমরা সবাই সেই দিনটির অপেক্ষায় আশায় বুক বেঁধে আছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।