জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, (জবি): দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে শহীদ মিনার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনেই এর অবস্থান।
তবে দেশের অন্যান্য শহীদ মিনার থেকে এ শহীদ মিনার অনেকটা ব্যতিক্রম। প্রথমবারে দেখলে কেউই বুঝবে না এটি কোনো শহীদ মিনার। মনে হবে এটা অন্য কোনো স্থাপত্য নিদর্শন। অন্যান্য শহীদ মিনারে তিন থেকে পাঁচটি বেদি থাকলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শহীদ মিনারে রয়েছে আটটি বেদি। এ শহীদ মিনারের প্রধান বেদিটি সামনের দিকে অর্ধনমিতভাবে দাঁড়ানো অবস্থায় রয়েছে। আর অন্য বেদিগুলো নিজ অবস্থান থেকে পেছনের দিকে হেলানো। অনেকে মনে করেন ভাষার দাবিতে সারিবদ্ধ আন্দোলনকে বোঝাতেই শহীদ মিনারটি এভাবে তৈরি করা হয়েছে। তবে শুধুমাত্র ২১শে ফেব্রুয়ারি আসলেই এটির খবর নেওয়া হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। অন্য সময় শহীদ মিনারের খোঁজ রাখা হয় না।
জানা গেছে, তৎকালীন মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এ শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। সে সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরির কাজ কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু জানিয়েছেন ৯০ সালের পর এটি নির্মাণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ মিনারের সিঁড়ি ও বেদিগুলোয় ধূলা-বালি জমে আছে। দেখেই বোঝা যায় পরিষ্কার হয়নি অনেকদিন। শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে বসে আছেন। অনেকে জুতা না খুলে শহীদ মিনারে উঠে পড়ছেন। শহীদ মিনারের চারিদিকে চিপসের প্যাকেট, কফি পানের প্লাস্টিকের কাপ ও শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত কাগজের টুকরা পড়ে রয়েছে। অনেকের ধারণা এখানে অসামাজিক কর্মকাণ্ডও চলে। এটা শহীদ মিনারের চাইতে আড্ডা দেওয়ার জায়গা হিসাবেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। যা শহীদদের মর্যাদাকেও ক্ষুণ্ণ করছে।
তবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে শহীদ মিনার চান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শহীদ মিনারের গঠন যেমনই হোক এর প্রতি তাদের যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সম্মান আছে। তবে এটিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে করলে আরও সুন্দর হবে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান রানা বলেন, আমি যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম এসেছিলাম তখন শহীদ মিনারটিকে দেখে ভেবেছিলাম এটা হয়তো অন্য কোনো ভাস্কর্য। পরে জানতে পারি এটা শহীদ মিনার। তবে দেখে বোঝা যায় না, মনে হয় এ যেন আড্ডার উন্মুক্ত স্থল। শিক্ষার্থীরা বসে গল্প করছেন, হাসাহাসি করছেন। এতে শহীদদের সম্মানের প্রতি অবমাননা করা হচ্ছে। আমার মনে হয় শহীদ মিনারের গঠন পরিবর্তনের প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শামসুন নাহার জানান, শহীদ মিনার যেমনই হোক এর প্রতি আমাদের সম্মান রাখতে হবে। তবে এটা ঠিক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের শহীদ মিনারটি অনেকটা ব্যতিক্রম। তবে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে মনে হয় এ যেন ছাত্রদের সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনের চিত্র।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, প্রথমত শহীদ মিনারের প্রতি আমাদের সম্মান রাখতে হবে। শহীদ মিনার নিয়ে এর আগেও অনেক কথা উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নিয়ে আপাতত কিছু বলতে চাই না। বিষয়টি মাথায় আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২৩
এমজে