ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

পরীক্ষা মাঝপথে বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের প্রতিমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে নিয়ে গেল স্কুল কর্তৃপক্ষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৩
পরীক্ষা মাঝপথে বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের প্রতিমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে নিয়ে গেল স্কুল কর্তৃপক্ষ বুধবার রংপুরের শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিভাগীয় সাহিত্য মেলা ২০২৩’।

রংপুর: রংপুরে পরীক্ষা বন্ধ রেখে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের অনুষ্ঠানে ‘দর্শক’ হিসেবে শিক্ষার্থীদের জোর করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে।  

ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এই অভিযোগ তুলেছেন।

তার নাম মাহমুদুল হক। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তিনি। তার ছেলে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।  

বুধবার (১৪ জুন) সকালে নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে বিষয়টি তুলে ধরেছেন মাহমুদুল হক।

ওই স্ট্যাটাসে তিনি অভিযোগ করেছেন, শিল্পকলা একাডেমিতে বুধবার ছিল বিভাগীয় সাহিত্যমেলার উদ্বোধনী দিন। তার ছেলের পরীক্ষা ছিল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। কিন্তু এসময়ে পরীক্ষা বন্ধ রেখে তার ছেলের মতো অন্য শিক্ষার্থীদেরও নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে।

মাহমুদুল হক লিখেছেন, স্কুলের বাচ্চাদের পরীক্ষা বাদ দিয়ে অনুষ্ঠানে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। আজ (বুধবার) আমার ছেলের সকাল ১০-১টা পরীক্ষা ছিল। কিন্তু এখন সে অনুষ্ঠানের দর্শক। এর দায় কে নিবে?বাচ্চাদের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া এমনিতেই বেআইনি। এর উপর ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে!

ফেসবুকের এই পোস্টের বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় মাহমুদুল হকের সঙ্গে।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, একজন শিক্ষকের ফোন থেকে ছেলে ফোন দিলে আমি স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলাম আমার ছেলে প্রতিষ্ঠানের বাইরে ওই অনুষ্ঠানে যেন না যায়। আমি দ্রুত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অধ্যক্ষকে অনুরোধ করি যাতে কোথাও গেলে আমার অনুমতি ছাড়া যেন না যায়। কিন্তু এরই মধ্যে পরীক্ষারত অবস্থায় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের ওই অনুষ্ঠানে নিয়ে যায় তারা। এমনকি পরীক্ষার খাতাও জমা নেয়নি। ছেলে বাসায় খাতা নিয়ে এসেছে বাধ্য হয়ে।

বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত এক পরীক্ষার রুটিনে দেখা গেছে, বুধবার (১৪ জুন) ডিজিটাল টেকনোলজি বিষয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ও বাংলা বিষয়ে ৭ম শ্রেণির পরীক্ষার তারিখ রয়েছে।  

জানা গেছে, সেই সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে মাঝপথেই পরীক্ষা বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের দর্শক হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক এ বিষয়ে বলেন, বিভাগীয় কমিশনার অফিস ও ডিসি অফিস থেকে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করাতে চিঠি দিয়ে ডাকা হয়। এটাতো না মানার কোনো সুযোগ নেই আমাদের। তাই পরীক্ষাই হোক আর গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসই থাকুক না কেন যেতেই হয়।

অভিভাবক মাহমুদুল হকের অভিযোগটি স্বীকার করেছেন বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আহসান হাবিব।

তিনি বলেন, বিভাগীয় সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। যেহেতু সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠান, সেহেতু আমার কাছে ছাত্রছাত্রীদের চাওয়া হয়েছিল। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বুধবার অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন ছিল, এটা পরীক্ষা না। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল আর কিছু নয়।  

শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ফেসবুক পোস্টের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি শুনেছি এবং আমি দেখেছি তিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে সেখানে ২টি ভুল তথ্য দিয়েছেন। নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী পরীক্ষা তো শুধু এসএসসি ও এইচএসসির হবে।  

বিভাগীয় সাহিত্য মেলার ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে  প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদ ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা।

আরও উপস্থিত ছিলেন রংপুর জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন, বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, কবি-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিককর্মীরা।  

এর আগে সকালে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।