ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি): বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিবর্তে ক্লাস নেওয়া হবে অনলাইনে।
আগামী সপ্তাহ থেকে ইবিতে প্রতি সোমবার প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ বন্ধ থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান। শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেও তারা খরচ কমানোর বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিবহন খরচ কমানোর বিষয়টিকেও।
গত রোববার ইবি কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের অসন্তোষের বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রতন রয় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে এমন হিসাব করে একটি পোস্ট দেন। তিনি লেখেন- ৮০ জনের একটি ক্লাস রুমে ফ্যান চলে অতিরিক্ত মোট নয়টি। লাইট চলে ৪টি। এখন ৮০ জন স্টুডেন্ট অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে তাদের নিজেদের রুমে ফ্যান চালাবে সর্বনিম্ন ৮০টি। কুষ্টিয়ার যা আবহাওয়া অনেকে ডাবল ফ্যান চালায়, তবুও কাজ হয় না। আর এদিকে লাইট চলবে ৮০x২= ১৬০ টি। অন্যদিকে শিক্ষক মহোদয়গণ এসি রুমে বসে ক্লাস নেবেন। ক্যাম্পাসের ইন্টারনেট সার্ভিসের কথা নাইবা বললাম। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ইবি কর্তৃপক্ষ কীভাবে সরকারি নির্দেশনা মেনে এসব আজগুবি সিদ্ধান্ত নিল?
এইচ এম আরাফাত নামে অপর এক শিক্ষার্থী লিখেছেন- কোন যুক্তিতে এই ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে আমি জানি না। অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত প্রহসনমূলক।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিরুল কবির সৌরভ লিখেছেন- অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নেওয়া এটাকে আমি কৌশলে একদিন ক্যাম্পাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বলবো। যেখানে ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গায় নেটের অবস্থা করুণ, সেখানে অনলাইন ক্লাসের নামে প্রশাসন একটা প্রহসনের সৃষ্টি করেছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থী খুবই একটা ক্ষতির মুখে পড়বে। করোনার ধাক্কার পর এই ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
কথা হলে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমান সুইট বলেন, অনলাইনে পাঠদানের মাধ্যমে পাঠদানের মুল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। অনতিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসবে বলে আশা করছি।
প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পরিবর্তে অপচয় ও খরচ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষ সপ্তাহের একদিন সরাসরি ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করলে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যহত হবে বলেও মনে করেন তারা। একইসঙ্গে এমন সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
এর আগে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়, রেভিনিউ খাতের ব্যয় সাশ্রয় ও হ্রাস করা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করা আবশ্যক। এ অবস্থায় প্রতি সপ্তাহে সোমবার অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার জন্য সব শিক্ষকদের অনুরোধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহ সোমবার অনুষ্ঠিত হবে না তবে অফিসসমূহ যথারীতি চলবে।
এ বিষয়ে পরে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে পরে কি হবে সেটা বলতে পরবো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ. কে. এম. শরীফ উদ্দীন বলেন, সপ্তাহে একদিন অনলাইনে ক্লাস হলে বিদ্যুৎ খরচ কিছুটা কমবে। ফ্যান এবং লাইটের থেকে বিভিন্ন ক্লাসরুম ও শিক্ষকদের রুমের এসি বন্ধ থাকলে বিদ্যুৎ খরচ অনেকাংশেই কমে যাবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, সরকারি নির্দেশনার আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখানে বিদ্যুতের তুলনায় পরিবহনের খরচটা সাশ্রয়ের জন্য আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব সমস্যা তো সমাধান করা যাবে না, কিছু কিছু সমস্যা তো থাকবেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২৩
এমজে