রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি কাণ্ডে তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া সেই নতুন শিক্ষার্থীর ভর্তিও বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পান্ডে গণমাধ্যমকর্মীদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রাবির ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি এখন প্রমাণিত। আর এই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আহসান হাবীবের (ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর ৬০৫৮৪, ইউনিট সি, গ্রুপ-৩; সাকিন খষ্টি, থানা পীরগঞ্জ, জেলা রংপুর) ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে আহসান হাবীবকে অর্থের বিনিময়ে অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে ভর্তি হতে সহায়তা করায় তিনজনকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন- রাবি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (সম্মান) শিক্ষার্থী শাকোয়ান সিদ্দিক প্রাঙ্গণ (শহীদ হবিবুর রহমান হল), লোক প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (সম্মান) শিক্ষার্থী মাহিবুল মোমিন সনেট (শহীদ হবিবুর রহমান হল) ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (সম্মান) শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ (শেরে বাংলা ফজলুল হক হল)।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলেও উল্লেখ করেন জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পান্ড।
এদিকে রাবি ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে জড়িত ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
১৯ আগস্ট ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন- রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, শের-ই বাংলা ফজলুল হক হল শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখার কর্মী মহিবুল মমিন সনেট ও শের-ই বাংলা ফজলুল হক হল শাখার কর্মী শাকোয়ান সিদ্দিক প্রাঙ্গণ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা-পরিপন্থি অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত চারজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।
এর আগে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে ছাত্র লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরে তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
রাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত সবাই মানতে বাধ্য। আর তন্ময়কে এর আগেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। যদিও পরে তা প্রত্যাহার হয়। কিন্তু তিনি আবার একই অপকর্ম করেছে। তার দায়ে এবার তাকে স্থায়ীভাবেই বহিষ্কার হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাবির ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমিদ তন্ময়সহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে ভর্তি হতে আসেন মো. আহসান হাবিব নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য তার মায়ের সঙ্গে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ভবনে যান। ভর্তির পর ওই দিন দুপুরেই অজ্ঞাতপরিচয় ৪/৫ জন ব্যক্তি তাকে অপহরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা আবাসিক হলের তিনতলায় নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর বাবার কাছে ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। পুলিশের সহায়তায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেখান থেকে উদ্ধার করে। এই সময় আহসান হাবিব পুরো ঘটনাটি জানান।
আরও পড়ুন>> প্রক্সি দিয়ে পরীক্ষায় টিকলেও ভর্তি হতে গিয়ে ধরা পড়ল শিক্ষার্থী
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
এসএস/এএটি