কক্সবাজার: শুধুমাত্র আর্থিক অনিয়ম নয়, তার নিজের শিক্ষক ও কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকেন রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম। তিনি যোগদানের পর তার টেবিলের সামনে চেয়ারগুলো সরিয়ে ফেলা হয়।
এছাড়াও শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অশোভন আচরণের কারণে তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
অভিযুক্ত মুজিবুল আলম রামু এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা এবং ওই কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
এরআগে, শনিবার (০৭ অক্টোবর) “ভুয়া প্রকল্প-বিনা রশিদে ‘অধ্যক্ষের পকেট’ কোটি টাকা’ শিরোনামে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম এ সংবাদ ছাপা হয়। সংবাদটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং সচেতন মহলে দারুণ সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কিছু আগে একটি অফিসিয়াল কাজে অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে দেখি সামনে চেয়ার নেই। তাই আমি দাঁড়িয়েই কাজ সেরে চলে এসেছি।
তিনি বলেন, ছাত্র নাম ধরে ডাকলেও আমাদের করার কিছুই নেই, তিনি তো এখন অধ্যক্ষ। আমার চাকরি আছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময় পর্যন্ত সবকিছু সহ্য করতে হবে।
কলেজের আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আকতার জাহান বলেন, অধ্যক্ষ রামুর সন্তান এবং এ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সুপ্রতিম স্যার, প্রণতি ম্যাডাম, সাহাব উদ্দিন স্যার, আবু তাহের স্যার তারা কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক। কিন্তু তারাসহ সব সিনিয়র শিক্ষকদেরও নাম ধরে ডাকেন অধ্যক্ষ। তিনি যোগদানের পর তার কক্ষে টেবিলের সামনের চেয়ারগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। এই কারণে তার সঙ্গে শিক্ষকদের দাঁড়িয়ে কথা বলতে হয়। বিষয়টি শিক্ষকদের জন্য যেমন অসম্মানের তেমন দৃষ্টিকটু।
কথায় কথায় অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম শিক্ষক-কর্মচারীদের হুমকি দেন জানিয়ে আরেক শিক্ষক বলেন, তিনি সব সময় বলেন, আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনারা জানেন? আমি ২৪তম বিসিএস। আমি আপনাদের এসিআর দেব।
এই শিক্ষক বলেন, তার (অধ্যক্ষের) এমন অশালীন আচরণের পরও বেশিরভাগ শিক্ষক তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না। কিন্তু ধৈর্যের সীমা পার হলে যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটবে। এছাড়াও অধ্যক্ষের শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণে অনেক শিক্ষক সুযোগ পেলেই এ কলেজ থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট রামু কলেজ সরকারি হয়। এরপর ২০২২ সালের ৮ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর থেকে সংযুক্তিতে কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান ২৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা মুজিবুল আলম। সরকারি করণের পাঁচ বছর হলেও এখনও কলেজটিতে বেসরকারি নিয়মে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে শুধু অশালীন আচরণ করেন তা নয়, বিনা রশিদে প্রশংসাপত্র, প্রত্যয়ন পত্র, বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং পছন্দের শিক্ষকের নামে ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ ছাড়াও কলেজের বিভিন্ন খাতে যেমন- জমির লাগিয়ত (খাজনা), ঘাস বিক্রিসহ কয়েকটি খাতে আয়ের টাকা কলেজ তহবিলে জমা না করে নিজে আত্মসাৎ করেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
রামু কলেজ প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের সহ-সভাপতি ও রামু কলেজের দাতা পরিবারের সদস্য উন্নয়নকর্মী নুরুল কবির বাংলানিউজকে জানান, কলেজটিতে আমাদের অনেক স্মৃতি। দীর্ঘদিন পর উপজেলার একমাত্র কলেজটি সরকারি হয়েছে। এটা নিয়ে রামুবাসী খুবই খুশি। কিন্তু সরকারি করণের পাঁচ বছর পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেসরকারি নিয়মে বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় করা হচ্ছে এটা খুবই দুঃখজনক। এছাড়া শিক্ষকদের অসম্মান করাসহ অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে যা শুনছি বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা অধ্যক্ষের কাছে এসব আশা করিনি। কলেজটি সুপথে পরিচালিত হোক, শিক্ষার মান উন্নয়ন হোক, এটাই আমরা চাই।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকার বিষয়টি সত্যি নয়। কয়েকজন শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। কলেজে আমার সরাসরি শিক্ষক আছেন সুপ্রতিম স্যার ও প্রণতি ম্যাডাম। আমি তাদের কোনো দিন নাম ধরে ডাকিনি।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে আনিত অন্যসব অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভুয়া প্রকল্প-বিনা রশিদে ‘অধ্যক্ষের পকেটে’ কোটি টাকা
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২৩
এসবি/এসআইএ