ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

পাবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ, প্রশাসন নীরব

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২৩
পাবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ, প্রশাসন নীরব পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিন

পাবনা: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। নিয়মবর্হিভূতভাবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজ ব্যবহার করছেন।

অথচ এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ ঘটনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে। প্রশাসনের নীরব ভূমিকার বিষয়ে কথা বলতে গেলে সংশ্লিষ্টরা কোনো মতামত দেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিনকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তিনি পাবনা শহরে অবস্থিত মানামা অরণ্য টাওয়ারের ১২ তলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে বাস করছেন। গেস্ট হাউজে অতিথিদের জন্য চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ রয়েছে। প্রতিজন অতিথিকে এসব কক্ষের জন্য দৈনিক ২৫০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট রুমে থাকার নিয়ম অনুযায়ী কোনো অতিথিকে থাকতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসক সর্বোচ্চ সাতদিন, ছয় রাতের জন্য অনুমতি দিতে পারেন। কিন্তু কোষাধ্যক্ষ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজের একটি রুম ব্যবহার করছেন।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক। তারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনকে বিষয়টি একাধিকবার জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগেই প্রশ্ন মডারেশন, মৌখিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কাজে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অনেক শিক্ষক এখানে আসেন। তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে। সেখানে এমনিতেই রুম সংকট; তার ওপর কোষাধ্যক্ষ একাই একটা রুম দখল করে রেখেছেন। প্রায় সময়ই দেখা যায় অতিথিদের রাখার জন্য গেস্ট হাউজে জায়গা পাওয়া যায় না। তাদের অবস্থান নিয়ে শিক্ষকদেরই দুশ্চিন্তা করতে হয়। উপাচার্য ও গেস্ট হাউজ প্রশাসককে বিষয়টি জানালেও তারা সমস্যা সমাধানের কোনো পদক্ষেপ নেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ক্যাম্পাসে থাকেন। উপ-উপাচার্য বাসা ভাড়া করে থাকেন। অথচ, কোষাধ্যক্ষ গেস্ট হাউজের একটা রুম দখল করে বসে আছেন। সরকার উনার চাকরির জন্য বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি বাসা ভাড়া না নিয়ে গেস্ট হাউজে থাকছেন। নিয়মের তোয়াক্কা না করে তিনি গেস্ট হাউজের রুম দখল করে থাকছেন বছর ধরে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিন গেস্ট হাউজে থাকতে উপাচার্যের সম্মতিতে গত এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লিখিত অনুমতি দিয়েছে। এজন্য মাসিক ভাড়া সাত হাজার পাঁচশ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু মোবাইলে কল দেওয়ায় তিনি এ মাধ্যমে ‘কথা বলবেন না’ বলে লাইন কেটে দেন। পরবর্তীতে তার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টাও করা হয়। তবে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

নিয়ম ভেঙে গেস্ট হাউজে কোষাধ্যক্ষ মাসের পর মাস থাকছেন- বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে জানতে হলে দাপ্তরিক কমসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করুন। ’

উল্লেখ্য, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গত এক বছরে ভর্তি পরীক্ষার টাকা ভাগ-বাটোয়ারা, লিফট কেনার জন্য তুরস্ক সফর, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।