ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: শীতল হাওয়া বয়ে যায়। ভোরের বাতাসে জড়ো হয় কুয়াশা।
শীতের ছোঁয়া লেগেছে রাজধানীর কেন্দ্রে অবস্থিত প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ-ছবিতে।
ঠান্ডা বাতাস আর শীত এড়াতে পাতলা পোশাকের বদলে জ্যাকেট, হুডি, চাদরসহ ভারী পোশাক উঠেছে শিক্ষার্থীদের গায়ে। ক্লাসের ফাঁকে, অবসরে টিএসসির সবুজ চত্বর, হাকিম চত্বর, কবি জসীম উদ্দীন হল মাঠসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সকালের রোদ মাখতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। তারা মেতে ওঠেন গল্প, আড্ডায়।
শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনিন্দ্য সুন্দর মনে হয় শিক্ষার্থীদের। তাদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি ও আধুনিকতার দ্বৈত প্রকাশে ক্যাম্পাসে শীত বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
এ ঋতু শীতল আবেশে মনকে স্পর্শ করে বলে মনে করেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী রিদওয়ান আল হাসান। তিনি বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে যেমন কংক্রিটের ছোঁয়া, বড় বড় অবকাঠামো, মেট্রোরেলের স্টেশন-লাইন আছে, তেমনি আছে বিভিন্ন ধরনের ফল-ফুলের গাছ। প্রকৃতি ও আধুনিকতার দ্বৈত প্রকাশে শীতকালে ক্যাম্পাস যেন হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য।
তিনি বলেন, ভোরের কিংবা মধ্যরাতের কুয়াশার চাদর উত্তপ্ত নগরীর এ প্রান্তে এক শীতল আবরণ মেলে দেয়। শিক্ষার্থীদের মনের অতলকে স্পর্শ করতে চায় শীতল আবেশে। মৃদু বাতাস, হিমেল হাওয়ায় প্রিয়জনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় এ ক্যাম্পাস।
রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী আলিফ নুসরাতুন নাহার বলেন, হলে থাকার ফলে ক্যাম্পাসের পরিবেশকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। আমার কক্ষের উত্তর জানালা দিয়ে শীতল বাতাস হু হু করে প্রবেশ করে। শীতের সকালে হলের মাঠে শিশির ভেজা ঘাসের ওপর হাঁটা, নাস্তা করতে যাওয়ার সময় ডাইনিংয়ের সামনের শিউলি গাছটির নিচ থেকে ফুল কুড়িয়ে নেওয়া আর হাকিম চত্বরের ছাতিম ফুলের মৃদু ঘ্রাণের সঙ্গে রং চা যেন প্রাণশক্তি দ্বিগুণ করে তোলে।
এদিকে ঠান্ডা বাড়তেই শীতকালীন পোশাকের বিক্রি বেড়েছে। ভ্যান-টেবিলের ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে শিক্ষার্থীরা কিনছেন পছন্দের শীতকালীন পোশাক। তবে হতাশার কথা শোনান হুডিবিক্রেতা মাসুদ। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা তেমন নেই। ঠিকমতো বসতে পারি না।
প্রতিবার এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে শীতকালীন গরম পিঠা পাওয়া যেত। ভাপা, চিতই, ডিম চিতই, মালপোয়া, নকশী, পাকনসহ বাহারি গ্রামীণ পিঠার জনপ্রিয়তাও ছিল বেশ। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদে কঠোর হওয়ায় ক্যাম্পাসে এসব দোকানের অস্তিত্ব নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এলাকায় সন্ধ্যার পর গরম দুধ ও সিদ্ধ ডিমের দোকান বসে। বিক্রিও খারাপ নয়। দুধবিক্রেতা বেলাল হোসাইন বলেন, বেচাকেনা ভালো। তবে গতবছর আরও ভালো ছিল। সে তুলনায় এবার তেমন নেই।
শীতের আসার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ব্যাডমিন্টন ও ক্রিকেট খেলা। রোদের তেজ কম থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠগুলোতে দিনব্যাপী ক্রিকেট চলে। শর্ট পিচ ক্রিকেটের প্রতিই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি। রাতেও বিভিন্ন স্থানে স্ট্যাম্প বসিয়ে এ খেলা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
ভাবনা চত্বরে, স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের সামনের রাস্তায়, মধুর ক্যান্টিনের সামনে খোলা আলোয় প্রায়শই ক্রিকেটে মেতে ওঠেন তারা। মলচত্বরে শর্ট পিচ ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা থাকলেও শতবর্ষী ভাস্কর্য নির্মাণকাজের কারণে সেখানে খেলার উপায় নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবগুলো আবাসিক হলেই ব্যাডমিন্টনের কোর্ট বানানো হয়েছে। মধ্যরাত পর্যন্ত অধিকাংশ মাঠেই চলে খেলাটি। এ ছাড়া বটতলা, হাকিম চত্বর, টিএসসির সড়কদ্বীপ, পায়রা চত্বরসহ কয়েকটি স্থানে ব্যাডমিন্টন খেলা চলে।
বটতলায় ব্যাডমিন্টন খেলতে আসা শিক্ষার্থী তাজউদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, শীতকাল মানেই ব্যাডমিন্টন খেলা। এ খেলার ওপর কোনো খেলা নেই।
শীতল আবহাওয়ায় অনেকেই দলবদ্ধ হয়ে আয়োজন করছেন বারবিকিউ পার্টি। বিভাগ, ব্যাচ, জেলা, বাস কমিটিসহ নানা দলভুক্ত হয়ে এসব আয়োজন করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
বটতলায় ব্যাচের সাথে বারবিকিউ পার্টি করছেন লোকপ্রশাসন বিভাগের নাদিম মাহমুদ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ক্লাস-পরীক্ষার পর সবাই মিলে একটু আনন্দ করতেই এ আয়োজন। শীতকাল ছাড়া বারবিকিউ করে মজা নেই। সবাই একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি, আগুন পোহাচ্ছি, নিজেরা কাজ করছি; এই তো আনন্দময়।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩
আরএইচ