নরসিংদী: সারাদেশের সব এসএসসি পরীক্ষার্থীর মতো নরসিংদী ডিজিটাল গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে যায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম প্রবেশপত্র নিয়ে না আসায় তারা কেউই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। পরে তারা নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার দাবি ও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে অবস্থান নেন। দুপুরে শিক্ষার্থী অর্পিতার বাবা গৌরাঙ্গের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলমের কাছে দায়ের করে তারা।
শিক্ষার্থীরা হলো- চাঁদনী আক্তার, অর্পিতা সূত্রধর, জান্নাতুল ফেদৌস, মেঘলা আক্তার, সুমাইয়া আক্তার জয়া এবং তৈয়বা আক্তার। তাদের মধ্যে তৈয়বা আক্তার নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বাকি ৫ জন ব্রাহ্মন্দী গালস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিল।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানান, তারা নিজ নিজ স্কুল থেকে টেস্ট বা নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। পরে তারা নরসিংদী ডিজিটাল গালর্স হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমিনুল ইসলাম তাদের সঙ্গে ১৫ হাজার টাকা করে জনপ্রতি কন্ট্রাক করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সব ব্যবস্থা করে দিবে বলে অঙ্গীকার করে। শিক্ষার্থীরা কন্ট্রাক অনুযায়ী প্রত্যেকেই ১৫ হাজার টাকা করে দেয়। আমিনুল ইসলাম এ পরীক্ষার্থীদেরকে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির থাকার কথা বলে।
এ অবস্থায় আমিনুল ইসলামের কথা মতো রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের উপকেন্দ্র বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে সব প্রস্তুতি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য হাজির হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হয়নি এবং তাদের কোনো প্রবেশপত্রও দিতে পারেনি। এতে তারা কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং পরে তারা সেখান থেকে ফিরে নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি প্রতারক শিক্ষকের বিচার দাবি করে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চাঁদনী জানান, ব্রাহ্মন্দী গার্লস স্কুলে আমরা অকৃতকার্য হলে সেখান থেকে এসে নরসিংদী ডিজিটাল গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম স্যার আমাদের দশম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে নেয়। শুধু বলা হয়েছে ফরম ফিলাপ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা ও অন্যান্য ফি বাবদ ১০ হাজার টাকা ওনাকে দিতে হবে। পরবর্তীতে উনার কথামতো আমরা ভেঙে ভেঙে মোট ১৫ হাজার টাকা দিই কিন্তু আমাদের মধ্যে দুই তিনজনের কাছ থেকে এখনো উনি দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে পাবে। কিন্তু আমরা বাকিরা তো টাকা পরিশোধ করেছি। তাহলে কেন আমরা পরীক্ষা দিতে পারলাম না। আমরা এর বিচার চাই। আমাদের টাকা ফেরত চাই।
ভুক্তভোগী অর্পিতা সূত্রধরের মা বলেন, আমরা গতকাল রাত পর্যন্ত স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। ওনার কথামতো টাকা ও পাঠিয়েছি। তিনি আমাদের সকালে কেন্দ্রের সামনে থাকতে বলেছেন প্রবেশপত্র দেবেন। কিন্তু সকালে ওনার মোবাইল বন্ধ, কোনো খোঁজ নেই। আমার মেয়ে পরীক্ষা দিতে পারলো না। আমরা শিক্ষকের বিচার চাই।
এদিকে দুপুরে নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকার মালাকার মোড়ের নরসিংদী ডিজিটাল গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্কুলের প্রতিটি কক্ষ তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। আর জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে স্কুলটির কোনো নিবন্ধন নেই। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সেই প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় না বসিয়ে ওদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। আমরা অতিদ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। একই সঙ্গে প্রতারক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আর অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, তারা যেন নিয়ম এবং নীতিমালার বাইরে না যায়। কোনো শিক্ষার্থী যদি নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় তাহলে তারা যেন অপেক্ষা করে। ভুল করেও যেন এমন প্রতারণার ফাঁদে পা না দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪
জেএইচ