ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সরকারি নির্দেশ মানছে না বিআরবি আজগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৪
সরকারি নির্দেশ মানছে না বিআরবি আজগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি

খুলনা: সরকারের নির্দেশ মানছে না খুলনার তেরখাদা উপজেলার বিআরবি আজগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। আইনি বিধান ও সরকারের নির্দেশনা থাকার পরও ফৌদজারি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্র নাথ মল্লিককে বরখাস্ত করা হচ্ছে না।

এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও বিশিষ্টজনেরা অবিলম্বে অভিযুক্ত তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং সরকারের নির্দেশনা অমান্যকারী ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে দেওয়া ও এর সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এলাকাবাসী বলছেন, বিগত দিনে বিদ্যালয় চত্বরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। এসব স্থাপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গণহত্যার স্মৃতিফলক, জাতির পিতার ঐতিহাসিক ম্যুরাল ‘বঙ্গবন্ধু: স্টেটস ম্যান অব দ্য সেঞ্চুরি’, মুক্তমঞ্চ (আংশিক)। এসব স্থাপনা নির্মাণের সময় ব্যাপক অনীহা দেখিয়েছেন প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্র নাথ মল্লিক। তাছাড়া জনমত উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ে আপন মামাতো ভাইকে অনৈতিক পন্থায় অবৈধ সনদে চাকরি দিয়েছেন। এসব কারণে তার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ মল্লিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তবু কোনো প্রতিকার পায়নি এলাকাবাসী।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তেরখাদা উপজেলার বিআরবি আজগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফৌজদারি মামলার আসামি রমেন্দ্রনাথ মল্লিককের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আবেদন করেছেন ওই বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি সুধাংশু কুমার মল্লিক ওরফে মল্লিক সুধাংশু। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ মল্লিক পাঁচ কোটি টাকার একটি মানহানি মামলার আসামি। ওই মামলায় আদালত তার বিরুদ্ধে চার্জও গঠন করেছেন। এ বিষয়ে আইনি মতামতের জন্য জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলামের দপ্তরে প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র গত ২৪ এপ্রিল পাঠানো হয়।

সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) আইনগত মতামত দিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) পাঠানো চিঠিতে জানান, এ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আসামি রমেন্দ্রনাথ মল্লিকের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর বিজ্ঞ বিচারিক আদালতে পেনাল কোডের ৫০০/৫০১ অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। সে কারণে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৩৯(২) ধারার বিধান মতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ায় সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অভিযোগপত্র গ্রহণের দিন হতে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে।

গত ৩০ এপ্রিল তার এ মতামত খুলনা জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছানোর পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিতান কুমার মন্ডল গত ১৩ মে জেলা শিক্ষা অফিস বরারবর শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ মল্লিককে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। এরপর জেলা শিক্ষা অফিসার পত্র প্রেরণের মাধ্যমে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে শিক্ষক রমেন্দ্র নাথ মল্লিককে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেন। তথাপি ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে রমেন্দ্রনাথ মল্লিককের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রবং তাকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন মহলে তদবির করছে।

‘সরকারের নির্দেশনা অনুসারে কেন চার্জশিটভুক্ত আসামি রমেন্দ্র নাথ মল্লিককে এখনো সাময়িক বরখাস্ত করা হয়নি?’ এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরবি আজগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সুনীল কুমার বালা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তেরখাদা উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্দেশনা টেনে দাবি করেছেন, তারা যে ভাবে আমাদের পরিচালনা করছে আমরা সেই ভাবে চলছি।

এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফারহান নাজ বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিআরবি আজগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতিকে জেলা শিক্ষা অফিসারের পক্ষ থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চিঠি দিয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি তিনি বরখাস্ত না করেন তবে বিষয়টি আমরা বোর্ড চেয়ারম্যানকে অবহিত করবো।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, বিধি মোতাবেক বিআরবি আজগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ মল্লিককে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৪
এমআরএম/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।