ঢাকা, বুধবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রত্যয় স্কিম প্রজ্ঞাপন বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৪
প্রত্যয় স্কিম প্রজ্ঞাপন বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা

ঢাবি: সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকরা সুবিধা বঞ্চিত হবেন। ফলে এই স্কিমের বিরুদ্ধে সারা দেশের শিক্ষকরা ‘বাঁচা-মরার লড়াইয়ে’ রয়েছেন।

এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কারা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চায়, তা সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে।  

রোববার (২৬ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার সামনে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে প্রত্যয় স্কিম প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে এক মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই মন্তব্য করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আয়োজনে কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক ড. জিনাত হুদা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, কলা অনুষদের ডিন ড. আবদুল বাছির, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মো. আব্দুস সামাদ, টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রহিম, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মামুন, ফার্মেসি অনুষদের ডিন ড. ফিরোজ আহমেদ, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক শাহ কাওসার মোস্তফা আব্দুল্লায়ি, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম ওহিদুজ্জামানসহ প্রমুখ।

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, আগামীকালের মধ্যে প্রজ্ঞাপন বাতিল না হলে ২৮ মে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আমরা কর্মবিরতি পালন করব। কোনো চেয়ারম্যান, ডিন ও প্রাধ্যক্ষ অফিসে যাবেন না।  

এরপরও দাবি আদায় না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল বরাবর স্মারকলিপি দেবেন এবং ৪ জুন অর্ধবেলা কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা।

তারা জানান, জুন মাসে বাজেটে পর প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার নাকি প্রয়োগ করা হয়, শিক্ষকরা অপেক্ষা করবেন। পহেলা জুলাই থেকে এই প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস বন্ধ থাকবে।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, এই দাবির পেছনে সারা দেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ কর্মসূচি পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক কুমিল্লায় প্রশিক্ষণরত আছেন, তারাও এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন।

সাধারণ সম্পাদক ড. জিনাত হুদা বলেন, পৃথিবীর সেরা র‍্যাংকিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে আমরা ফিরে এসেছি। আমরা হ্যান্ডসাম স্যালারির পেছনে ছুটিনি। প্রত্যয় স্কিম বাতিলের পক্ষে আমরা প্রত্যয়ী।

অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, প্রত্যয় স্কিমের অনেক বিষয় স্পষ্ট নয়। বলা হয়েছে, যারা ১ জুলাই থেকে নিয়োগ পাবেন, তাদের ওপর এই স্কিম প্রয়োগ করা হবে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পদোন্নতিও নতুন নিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদরা একটা সমীক্ষা করেছেন। সেখানে দেখা যায়, পেনশন স্কিমের কারণে শিক্ষকরা আর্থিকভাবে বঞ্চিত হবেন।

অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সামাদ বলেন, সার্বজনীন পেনশন স্কিমকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এখন অন্তর্ভুক্ত করা হলো। আমরা যখন একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যানে গভীর মনযোগ দিয়ে কাজ করছি, তখন আমাদের রাস্তায় নামিয়ে আনা হলো। আমরা শিক্ষা-গবেষণা, ছাত্র সংশ্লিষ্ট বিষয় বাদ দিয়ে রাজপথে আসতে চাই না।

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক শাহ কাওসার মোস্তফা আব্দুল্লায়ি বলেন, এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হলো। এর আগেও শিক্ষকদের নানা সুবিধা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এভাবে চললে মেধাবীরা এখানে আসবে না।

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুবিধা অন্যান্য দেশের তুলনায় এমনিতেই অপ্রতুল। তারপর এই ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ স্কিমে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো।

অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাই। প্রত্যয় স্কিমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার ষড়যন্ত্র কারা করছে, তা সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৩ মার্চ সার্বজনীন পেনশন স্কিমে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার পর ১৯ মার্চ তা প্রত্যাখ্যান করে বিজ্ঞপ্তি দেয় শিক্ষক সমিতি। ৩ এপ্রিল এক সভায় এ নীতি প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ জানানো হয়।  

নীতি বাতিল না করায় ৩০ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত দাবির পক্ষে ঢাবি শিক্ষকদের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। এতে এক হাজার ৬১ জন শিক্ষক তাদের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের পক্ষে মত প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২৪
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।