যশোর: মারধরের শিকার হয়ে অভিযোগ করায়, তা তুলে নিতে শাহরীন রহমান প্রলয় নামে এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৪ জুন) রাতে শহিদ মসিয়ূর রহমান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানার ৩০৬ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শাহরীন জানান, রাতভর নির্যাতনের পর সোহেল রানা তাকে গুলি করে হত্যার হুমকিও দেন।
এরপর তার বুকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দিয়ে ছাত্রাবাস ছাড়তে নির্দেশ দেন সোহেল।
ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যবিপ্রবি প্রশাসনের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শাহরীন যবিপ্রবির শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রাবাসের আবাসিক বাসিন্দা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে শাহরীনকে মারধর করেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী শাহীনুর রহমান।
এই ঘটনায় শাহীনুরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন শাহরীন। ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে ছাত্রাবাসের কক্ষ থেকে শাহরীন ও তার সহপাঠী আমিনুল ইসলামকে ডেকে ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষে নিয়ে যায়। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ তার কয়েকজন অনুসারীও উপস্থিত ছিলেন।
সোহেল রানার কক্ষে নিয়ে শাহরীনকে প্রথমেই এলোপাতাড়ি মারধর ও রড দিয়ে পেটানো হয়। রাত দুইটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়েছে বলে দাবি করেন ওই শিক্ষার্থী।
এরপর ঘটনাটি যাতে ভুক্তভোগী কাউকে জানাতে না পারে, সেজন্য শাহরীন ও তার সহপাঠী আমিনুল ইসলামের মোবাইল কেড়ে নেন অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে ঘটনা জানাজানির ভয়ে বুধবার (৫ জুন) সকালে মোটরসাইকেলযোগে কালীগঞ্জ বারোবাজার গ্রামের বাড়ি চলে যান ভুক্তভোগী। দুপুরে শাহরীনের মায়ের মুঠোফোনে বিষয়টি যাতে কাউকে না জানানো হয় বলে হুমকি দেওয়া হয় অজ্ঞাত নম্বর থেকে। এমনকি এই বিষয়ে কাউকে জানালে বাড়িতে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় দুর্বৃত্তরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শাহরীন জানান, সোমবারের ঘটনায় আমাকে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ায় ঘটনায় আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। এই ঘটনায় ঘুম থেকে তুলে রাত দুইটা থেকে তারা মোটা রড দিয়ে আমাকে পেটানো শুরু করে। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় এমন নির্যাতন। এক সময়ে আমার মনে হচ্ছিল আমিও মনে হয় বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো মরে যাবো।
তিনি বলেন, প্রাণে বাঁচতে আমি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরে আকুতি জানাই। এসময় সোহেল রানা বলেন, কালকের মধ্যে অভিযোগ তুলে নিবি, না হলে তোকে গুলি করে মারবো।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব থাকে। এসব গ্রুপিংয়ে বারবার আমার নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি দাবি করেন- ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে, সেটা মাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ঘটনার দিন আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না। যশোরের বাইরে ছিলাম। মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে আমি ছাত্রাবাসে প্রবেশ করেছি। আমর বিরুদ্ধে যা অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসা।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে। তাকে এতই ভীতসন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিল যে কথা বলতে পারছিল না। তাকে বলেছি লিখিত অভিযোগ দিতে। অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত রিপোর্ট শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২৪
ইউজি/এসআইএস