রাজশাহী: কোটা বাতিলের দাবিতে আজও সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে প্রথমে রাবির প্যারিস রোডে অবস্থান নেন আন্দোলনরতরা।
এরপর সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটের সামনে গিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় বৃষ্টি এলেও তাদের কর্মসূচি থামেনি।
কর্মসূচি চলাকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মুহূর্মুহূ স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘সংগ্রাম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’সহ বিভিন্ন ধরনের লেখাসংবলিত ব্যানার, পোস্টার প্রদর্শন ও স্লোগান দিতে শোনা যায় শিক্ষার্থীদের।
বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্যসচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। আমরা হাইকোর্টের বিচারকদের মতো জ্ঞান রাখি না। তবে আমরা এটা জানি, এক শতাংশের কম জনসংখ্যার জন্য ৩০ শতাংশ কোটা অন্যায্য। এটা বুঝতে পৃথিবীর কোনো আইন জানা লাগে না। আমাদের দাবিগুলো স্পষ্ট, আমাদের আইন বোঝার দরকার নেই। দাবি কিভাবে আদায় করতে হয়, তা বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন চলবে।
আমানুল্লাহ আমান এ সময় চার দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, তাদের প্রথম দাবি হচ্ছে, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। একটা কমিশন গঠন করে সব ধরনের চাকরিতে যৌক্তিকভাবে সংস্কার করতে হবে এবং কোটা পাওয়া না গেলে মেধা দিয়ে পরিপূর্ণ করতে হবে। একজন শিক্ষার্থী তার পুরো জীবনে একবার কোটা ব্যবহার করবে। এমনকি এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে পারবে। ১০ বছর পরপর যে সমীক্ষা হয় সেই সমীক্ষায় কোটা পূর্ণ সংস্কার করতে হবে। তাহলে দেশে মেধাভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত, সুস্থ ও সুন্দর একটি আমলাতন্ত্র হবে।
এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি চাইছি যে, কোটা আন্দোলনটা সফল হোক। আমি প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি দেখছি, বন্ধুরাও আমার মতো কষ্ট করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আমি যদি কোটা প্রয়োগ করি, তাহলে আমার চাকরিটা হবে আর তারা বঞ্চিত হবে। তাই আমি চাই, এই কোটা যেন না থাকে।
আন্দোলনরত অন্য শিক্ষার্থীরা বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ তৎপর ছিল, আছে এবং থাকবে। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করার কোনো বিকল্প নেই। তাই বৈষম্যমূলক কোটাপদ্ধতির সংস্কারের লক্ষ্যে রাবি শিক্ষার্থীরা সর্বদা সোচ্চার রয়েছে।
আজকের কর্মসূচিতে রাবির বিভিন্ন বিভাগের প্রায় দেড় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি চলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২৪
এসএস/এএটি