বরিশাল: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
যদিও পাল্টা অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে কোটা সংস্কার নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কারীদের মধ্যে প্রকাশ্য বিবাদ দেখে তারা সেখানে যান এবং কথা বলতেই তাদের (ছাত্রলীগের) কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়।
আর সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় ঘটা পুরো এ ঘটনায় কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারী অন্তত ১০ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ৩ জন কর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে ২০ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় সভা করছিল। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা একে আরাফাতের নেতৃত্বে ২০-৩০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী লাঠি, রড ও পাইপ নিয়ে হামলা চালায়।
শুভর অভিযোগ তাদের সভাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া পুলিশ, বিজিবি, র্যাব সদস্যদের সামনে তাদের বেধড়কভাবে পিটিয়েছে। এতে তাদের ১০ শিক্ষার্থী গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। আর আহতদের মধ্যে সুজয় বিশ্বাস শুভসহ মাহমুদুল হাসান সজিব, ভুমিকা সরকার, সেজুতি, সিফাত, সুজন মাহমুদ, রাকিব মাহমুদ ও জুবায়েরকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগের মাহমুদুল হাসান তমাল, আল সামাদ শান্ত, খালেদ হাসান, শাহরিয়ার সান, সাব্বির, জাইফ, সাইফ, শরিফুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলামকে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন হামলায় আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বায়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ।
যদিও প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। তবে অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া আল সামাদ শান্ত বাংলানিউজকে জানান, গত দুই দিন ধরে ক্যাম্পাসে একটি গুঞ্জন উঠেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সমন্বয়কদের কাছে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা এসেছে। এ টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র সমন্বায়কদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে হট্টগোল শুরু হয়। তখন ছাত্রলীগের কর্মীরা গিয়ে তাদের কারফিউর মধ্যে এভাবে প্রকাশ্যে বিরোধ না করার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না করে ভাগবাটোয়ারা বাড়িতে গিয়ে করতে বলে। জবাবে তারা কারফিউ ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে পড়বে বলে হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে এ নিয়ে হাতাহাতি হলে, আন্দোলনকারীদের হামলায় ছাত্রলীগের তিন কর্মী আহত হয়েছে। যার মধ্যে শরীফ ও সান নামে দুজন রয়েছেন।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটনের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সভার শেষ দিকে ছিল। তখন কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপনকে সমর্থন জানানো কিছু শিক্ষার্থী গেট দিয়ে প্রবেশ করে। তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীদের অপর পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তখন পুলিশ প্রবেশ করে দুই পক্ষকে দুইদিকে সরিয়ে দিয়েছে।
এদিকে কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপনকে সমর্থন জানানো শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, তারা ছাত্রলীগ কিনা তা বলতে পারবো না, তবে তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস্ )মো. রিয়াজ হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে কোটা আন্দোলনের পক্ষের ১৫-২০ জন ছাত্র ক্যাম্পাসের ভেতরে মিটিং করছিল। তারা মিটিং শেষ করে চলে যাওয়ার সময় সাধারণ কিছু ছাত্র ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোটা আন্দোলনের স্বপক্ষে ১৫-২০ জন যারা ছিলেন তাদের গাড়িযোগে শহরে নিয়ে গেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং আমাদের জানামতে কোনো হতাহত নেই। আর এটুকু তথ্যই আমাদের কাছে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২৪
এমএস/জেএইচ