কক্সবাজার: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ভয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত কক্সবাজারের রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম। এ অবস্থায় রোববার (১১ আগস্ট) কলেজে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করা হলেও সোমবার (১২ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন অধ্যক্ষ।
‘রামু সরকারি কলেজ’ নামে কলেজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে অধ্যক্ষ ক্লাস বন্ধের ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম চলমান থাকায় আগামী ১২/০৮/২০২৪ হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।
অথচ বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় প্রথমবর্ষসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার কথা বলা হয়েছে।
এমনকি শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাশের কক্সবাজার সরকারি কলেজ, কক্সবাজার সরকারি মহিলা, নাইক্ষংছড়ি হাজী এম এ কালাম সরকারি কলেজসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন কলেজে পাঠদান চলমান রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী মঈদুল হাসান জিহাদ বাংলানিউজকে বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুরো জেলায় প্রতিবাদী নানা কর্মসূচি পালন করলেও রামু কলেজ এমনকি কলেজের বাইরেও কোনো ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা যায়নি। আন্দোলনের ডাক দিলেই শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ ও পুলিশ দিয়ে বাধা প্রদান, হামলা, নানাভাবে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়েছে রামু সরকারি কলেজের বহুল বিতর্কিত অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম। যেকারণে সরকার পতনের পরে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন অধ্যক্ষের খোঁজে গেলেও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। সেই থেকে তিনি কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন।
জিহাদসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, গত ৮ আগস্ট প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও শুরু হয়েছে আজ। আজকেই নোটিশ দিয়ে প্রথমবর্ষসহ সব ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেন অধ্যক্ষ। এটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকার দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এসব অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও সমাবেশ করলেও তা ধামাচাপা দেওয়া হয়। আমরা দুর্নীতিবাজ এ অধ্যক্ষের অবিলম্বে অপসারণ ও তার শাস্তির দাবি জানাই।
আরেক শিক্ষার্থী সিরাজুল হক জানান, দলীয় সরকার থাকতে এ অধ্যক্ষের অনিয়ম ও কলেজের কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ লেলিয়ে দিতেন অধ্যক্ষ। সব সময় অধ্যক্ষ ছাত্রলীগের কয়েকজনকে দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের ওপর দমন নিপীড়ন চালাতেন। এভাবে কাউকে মুখ খুলতে দেওয়া হয়নি। এখন সময় এসেছে তাই আমরা মুখ খুলছি এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি জানান, সরকার পতনের আন্দোলনের সময় ফেসবুকে আমি ‘হাড্ডি কখনো মাংস হয় না, ছাত্রলীগ কখনো মানুষ হয় না’ এ রকম একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। ছাত্র আন্দোলনের পক্ষের বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করাতে আমাকে ছাত্রলীগের ছেলেরা একের পর এক হুমকি দিয়েছে।
অধ্যক্ষের অপসারণ ও অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার অধ্যক্ষের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। কিন্তু অধ্যক্ষ টের পেয়েই নিজেকে বাঁচাতে পাঠদান বন্ধের ঘোষণা দেন। অথচ আশপাশের সব কলেজে ক্লাস চালু আছে।
প্রসঙ্গত, প্রশংসাপত্র বিতরণ, ভর্তি বাতিল, নির্বাচনি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জরিমানাসহ কয়েকটি খাতে বিনা রসিদে টাকা আদায়, অসংখ্য ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ, কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকা, শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, সরকারিকরণের পাঁচ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেসরকারি নিয়মে বেতন ও অন্যান্য ফি আদায়সহ নানা-অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের বিরুদ্ধে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট রামু কলেজ সরকারি হয়। এরপর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সুপারিশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর থেকে সংযুক্তিতে ২০২২ সালের ৮ আগস্ট কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান মুজিবুল আলম। যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশ দিয়ে দমনের বিষয়টি ঠিক নয়। আন্দোলনকারীদের আমি চিনি না।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কলেজে অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
কলেজের পাঠদান বন্ধ রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক না থাকা ও অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা না পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে কিছু জানি না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৪
এসবি/আরআইএস