ঢাকা, সোমবার, ৫ কার্তিক ১৪৩১, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

ছাত্রদের ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ বলা অধ্যক্ষের গ্রেপ্তার দাবিতে প্রভাষকের অনশন 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
ছাত্রদের ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ বলা অধ্যক্ষের গ্রেপ্তার দাবিতে প্রভাষকের অনশন 

লালমনিরহাট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকে প্রতিবন্ধী প্রজন্ম উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন আব্দুর রউফ সরকার নামে লালমনিরহাটের এক কলেজ অধ্যক্ষ।

সেই অধ্যক্ষকে চূড়ান্ত বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার দাবিতে অনশন শুরু করেন তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না নামে ওই কলেজের একজন প্রভাষক।

 

রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গেটে অনশনে বসেন ওই প্রভাষক।  

তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের উত্তর বাংলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক। ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়া আব্দুর রউফ সরকারও একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ।  উত্তর বাংলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে গত ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যোগদান করেন তিনি।  

অভিযোগ রয়েছে, যোগদানের পর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর অনৈতিক আচরণ করে নানাভাবে হয়রানি করছেন অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার। তার শক্তির প্রধান উৎস ছিলেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ। অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ তার নিজের অফিসকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পরিণত করেছিলেন।  

আরও অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ এবং রংপুর সাইবার ট্রাইবুনালে একটি মামলা করেন। এতেও থেমে থাকেননি তিনি। প্রভাষক তামান্নাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করেন। পরবর্তীতে শিক্ষক তামান্না উচ্চ আদালতের দারস্থ হলে তা স্থগিতের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে অধ্যক্ষ আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন আব্দুর রউফ। নির্যাতিত শিক্ষক তামান্নাকে কলেজে প্রবেশেও বাধা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বেতন ভাতাও প্রদান করছেন না।  

সেই সঙ্গে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না।

তাই অধ্যক্ষ আব্দুর রউফকে বরখাস্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এ প্রভাষক।  

এত কিছুর পরেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়নি।  উল্টো অধ্যক্ষ আব্দুর রউফের ক্রমাগত হুমকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন প্রভাষক তামান্না ও তার পরিবার। তাই ন্যায়বিচার পেতে রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গেটে অনশন শুরু করেন তিনি।  

এ বিষয়ে প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না বলেন, সন্তানতুল্য ছাত্রদের আন্দোলনকে যিনি প্রতিবন্ধী প্রজন্ম বলে দাবি করে পোস্ট করেছেন সেই লম্পট অধ্যক্ষ আব্দুর রউফকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত অনশন চলবে। এতে আমার মৃত্যু হলেও হবে। আবু সাঈদরা পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। সেই শহীদের আত্মার শান্তির জন্য আওয়ামী দোসরের গ্রেপ্তারের আন্দোলনে আমি জীবন দেব।

এদিকে জানা গেছে, বিকেল ৫টায় ৪০ মিনিটে জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার গিয়ে শরবত দিয়ে প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্নার অনশন ভাঙেন। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
এনইউ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।